ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ক্রিডেন্স’র শহরে সঙ্কটে ব্যান্ড ও তার শিল্পীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১
ক্রিডেন্স’র শহরে সঙ্কটে ব্যান্ড ও তার শিল্পীরা

বরিশাল: ভাটিয়ালি, রাখালি গান অত্যন্ত জনপ্রিয় বরিশালে। এখানে ব্যান্ডের যাত্রাও ৭০’র দশক থেকে।

বরিশালের প্রথম ব্যান্ড হিসেবে খ্যাতি পায় ক্রিডেন্স ব্যান্ড। যারা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে মিন্টোরোডে তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবনের হত্যাযজ্ঞেরও সাক্ষী।

সেই ক্রিডেন্সের যাত্রা থেকে শুরু করে টানা ৫ দশকে বরিশালে আজ ব্যান্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ডজনখানেকের ওপরে। তবে পৃষ্টপোষকতার অভাব এবং দীর্ঘসময়ের অবমূল্যায়নে দৃষ্টিগোচর হয়ে যাচ্ছে সেইসব ব্যান্ড আর ব্যান্ডের শিল্পীরা। বলতে গেলে স্থানীয়ভাবে ফোকাসে নেই তারা। নানান প্রতিকূলতায় অনেকটাই পর্দার আড়ালে গুটিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আর তাই পারিবারিক বা ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সক্ষমতাবিহীনরা নানান টানা পোড়েনের মধ্য দিয়ে দিন কাটছে এসব ব্যান্ড আর ব্যান্ডের শিল্পীদের অধিকাংশের।  

শিল্পীরা বলছেন নিয়মিত প্রোগ্রাম বা কনসার্টের আয়োজন না থাকায় বরিশালের শিল্পীরা ভালো নেই, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক কোন ইভেন্ট না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও নতুন শিল্পীরা তৈরি হচ্ছে না। অনেকটাই শেখার সুযোগ থাকলেও সহায়তার অভাবে প্রতিভা বিকাশের জায়গা না থাকার মতো অবস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালে বর্তমানে ১৫-২০টির মতো ব্যান্ডের দল রয়েছে। যারমধ্যে বরিশাল ব্যান্ড ফেডারেশন (বিবিএফ) এর সাথে সংযুক্ত আছে ১২টি দল, যেখানে ৮/১০ জন মেয়ে ভোকালসহ ৮৫ জন শিল্পী রয়েছেন। তবে এদেরমধ্যে এখন মেইনস্ট্রিম ও কমার্শিয়াল নামক দুটি ভাগ রয়েছে। যেখানে বরিশালে হাতে গোনো ১-২টি ব্যান্ড মেইনস্ট্রিমের ব্যান্ড রয়েছে। যদিও প্রতিটি ব্যান্ডই মেইনস্ট্রিমের চিন্তা করে যাত্রা শুরু করেছিলো, তবে সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এখন অনেকেই কমার্শিয়াল চিন্তাধারায় মগ্ন হচ্ছেন। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউই ভালো সময় পার করছেন না।  

গান শুনে আর দেখে শখের বসের ইনভেস্টমেন্টে গড়ে তোলা এবং বরিশালের মেইনস্ট্রিমে থাকা হেভিমেটালের একমাত্র ব্যান্ড ফ্লেইম এর ভোকাল ও গিটারিস্ট নাজমুস সাকিব জান্টি বলেন, বরিশাল অনেক সম্ভবনাময় একটি জায়গা। শ্রোতার পাশাপাশি এখানে ব্যান্ডের কনসার্ট বা শো করার মতো যথেষ্ট ইনডোর ও আউটডোরের লোকেশন রয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গেল কয়েকবছর ধরে তেমন কোন প্রোগ্রামই হয়নি বরিশালে। ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু আয়োজন করা হলেও তা বর্তমানে খুবই কম এবং বাজেটেও কম। আবার বড় বাজেটের কোন আয়োজন করলে সেখানে রাজধানীমুখী হন সবাই। আর তখন স্থানীয় শিল্পীদের শুনতে হয় লোকাল নামক শব্দটি।  

কিন্তু সেই লো-বাজেটের লোকালদের গান শোনার পরে প্রশংসাও আসছে জানিয়ে জান্টি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢাকার মতো সক্ষমতা বরিশালেও রয়েছে। বিশেষ করে ইনস্ট্রুমেন্টের কোন ঘাটতি নিয়ে বরিশালে। তবে সাধারণ মানুষ এখনো নির্দিষ্ট গন্ডির গানে আবদ্ধ, কিন্তু ব্যান্ডের উন্নয়নের জন্য অডিয়েন্স লেভেলের মেন্টালিটিরও চেইঞ্জ আনতে হবে।

তিনি বলেন, সবাই প্রফেশনাল, তবে যে ব্যান্ডগুলো আমাদের মতো মেইনস্ট্রিমে থাকার চিন্তা করে তারা লাখ লাখ টাকা ইনভেস্ট করলেও নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটায় না। আর বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ধারার গান করাসহ অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েই টিকে থাকছে কমার্শিয়ালরা।

এই ব্যান্ডের ড্রামার সুমন দেবনাথ বলেন, শ্রোতা থাকায় বরিশালের মতো জায়গায় থেকে অনেক ভালো কিছু আশা করা যায়। বরিশালের ব্যান্ড শিল্পীদের অ্যালবাম বের হয়েছে, তারা গান লিখছেন, সুর করছেন এমনকি অনেক ব্যান্ডের নিজস্ব স্টুডিও, প্রাকটিস প্যাড ও গান রয়েছে। আর ব্যান্ডের টিম মেম্বারদের মিউজিক্যালি ম্যাচিউরটি না থাকলে নিজস্ব গান তৈরি করা সম্ভব হতোনা।

তিনি বলেন, বিগত কয়েকবছর ধরে অডিও মার্কেটের খারাপ অবস্থা চলছে। তেমনই ভালো কনটেন্ট নেই, আবার উড়াধুরা গানে ভিউ বেশি। অর্থাৎ কোন শিল্পীর কোন গানটা হিট হবে তা বলা যায় না। এ কারণেই কনসার্টে এখনো মানুষ সেই জেমসের ‘পাগলা হাওয়া’, মমতাজের ‘পাঙ্খা’ কিংবা আইয়ুব বাচ্চুর গান বেশি শুনতে চায়। কারণ শ্রোতাদের মিউজিক্যালি চয়েজ চেইঞ্জ হচ্ছে না।  

‘খেয়া’ ব্যান্ডের ভোকাল ও বিবিএফ এর সাধারণ সম্পাদক গৌতম চন্দ্র ঢালী বলেন, শখটা একসময় প্রফেশনে রূপ নেয়। আর সেই প্রফেশনে টিকে থাকতে সব ধরণের গান করতে হচ্ছে ব্যান্ড শিল্পীদের, আবার নিজেকে টিকিয়ে রাখতে অনেকে ব্যান্ডনির্ভর ব্যবসাও খুলছেন। তবে শত চেষ্টার পরেও প্রোগাম না থাকায় এখন হতাশ ব্যান্ড শিল্পীরা। কেউ উপার্জন করতে পারছে না, আবার কেউ নিজেকে বিকশিত করতে পারছে না।

তিনি বলেন, মেয়র নাইটসহ আগে ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বড় বড় ইভেন্ট, কনসার্টের আয়োজন হতো, যা গেলো ৬-৭ বছর ধরে হচ্ছে না। এখন স্থানীয় ও ব্যক্তি উদ্যোগে যেটুকু আয়োজন করা হয় সেখানে ঢাকার শিল্পীদের জন্য যে বরাদ্দ হয়, তা হয় না স্থানীয় শিল্পীদের জন্য। এখানে থাকে বাজেট স্বল্পতার দোহাই।  

আবার বছরজুড়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরের নানান প্রোগ্রাম হলেও বরিশালে ব্যান্ডের শিল্পীদের সেখানে কখনোই ডাকা হয় না। এছাড়া শিল্পকলা কিংবা বাংলাদেশ বেতারের বরিশাল কেন্দ্রেও ব্যান্ডের শিল্পীদের কোন জায়গা নেই।  

তিনি বলেন, করোনাকালে ব্যান্ডের শিল্পীদের আরো খারাপ হয়েছে, কারণ এই শিল্পীদের পেটের কথা কেউ ভাবে না। শুধু খারাপ মনোভাব আর অপসংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেয়া হয় আমাদের ওপর।  

তিনি বলেন, আগে যেখানে ২৮ দিনে ৩২ প্রোগ্রাম করেছি, সেখানে এখন ৬ মাসেও সেরকম হচ্ছে না। আবার যারা প্রোগ্রাম পাচ্ছে তারা বিশেষ মহলের কারণে একচেটিয়া করছে।  

তবে আমরা চাই প্রশাসনিক সমবন্টন, বেশি বেশি প্রোগ্রামের আয়োজন, স্পন্সরদের এগিয়ে আসা, সকলের কনসেপ্টের পরিবর্তন ও শিল্পীদের আর্থিক মূল্যায়ন করা হোক।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২১
এমএস/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।