চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের দাপুটে অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আজ থেকে নয় বছর আগে। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন শক্তিমান এ অভিনেতা।
কিংবদন্তি এ অভিনেতার মৃত্যুদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যাঙ্গনের অনেকেই তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) তার নবম মৃত্যুবার্ষিকী। চলে যাওয়ার নয় বছর পরও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ ও ভক্ত-অনুরাগীদের চেতনায় চির উজ্জ্বল-অম্লান তিনি।
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরীদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। পরের বছর ১৯৭১ সালে অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে।
স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক জীবন শুরু করেন হুমায়ুন ফরীদি। সেখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ ঘটে। সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই সদস্যপদ পান ঢাকা থিয়েটারের। এই নাট্যদল থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার অভিনয়ের রঙগুলো। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক।
সেলিম আল দ্বীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকের তক্ষক চরিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হয় তার। ১৯৮২ সালে তিনি ‘নীল নকশার সন্ধানে’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল তার প্রথম টেলিভিশন নাটক।
এরপর অভিনয় করেছেন ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’, ‘সংশপ্তক’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’ এবং ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘প্রিয়জন নিবাস’র মতো দর্শকপ্রিয় নাটকে।
ঢাকা থিয়েটারের ‘শকুন্তলা’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’র মতো মঞ্চনাটকে অভিনয় করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন ফরীদি। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ ও ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’- এ কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান।
তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ সিনেমার মধ্য দিয়ে হুমায়ুন ফরীদির বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। নব্বই দশকে বাণিজ্যিক সিনেমার পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’ সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এরপরই দেশিয় চলচ্চিত্রে খল-নায়কের চরিত্রে তিনি নন্দিত হন।
শহীদুল ইসলাম খোকন ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘অপহরণ’, ‘দুঃসাহস’সহ ২৮টি সিনেমার মধ্যে ২৫টিতেই রাখেন ফরীদিকে। এছাড়া হুমায়ুন ফরীদি ‘দহন’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘মাতৃত্ব’ ও ‘আহা’র মতো অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
আশির দশকের শুরুর দিকে মিনুকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন ফরীদি। ২০০৮ সালে সেই সম্পর্কেরও বিচ্ছেদ ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
এমকেআর