সত্তরের দশকে স্বাধীন বাংলাদেশে পপ গানের স্থপতি বলা হয় ফিরোজ সাঁই, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগীর ও জানে আলমকে। ফিরোজ সাঁই ও আজম খান অনেক আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।
জানে আলমের সঙ্গে বহু স্টেজ মাতিয়েছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। একসঙ্গেই ছিল তাদের ওঠাবসা। প্রিয় এই মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন এই কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘জানে আলমের মৃত্যুর খবরটা অনেক গভীর রাতে শুনতে পাই, খুব কষ্ট পেয়েছি। এত কষ্ট এর আগে কারো মৃত্যুর খবর শুনে পাইনি। এর কোনো বিশ্লেষণ আমি দিতে পারবো না। ’
জানে আলম প্রসঙ্গে এই পপ তারকা বলেন, ‘ফিরোজ সাঁই থেকে শুরু করে জানে আলম পর্যন্ত; এর মধ্যে আমি, পিলু মমতাজ ও আজম খান, ফকির আলমগীরও রয়েছেন-জনপ্রিয়তার দিকটা যদি বাদও দেই, সাংস্কৃতিক দিক থেকে তাকে মূল্যায়ন করতে বলা হলে আমি বলব, আমাদের কারো চাইতে কম তো নই, বরং এক দুই পয়েন্ট বেশি পাবে জানে আলম। সে আমাদের সবার থেকে এগিয়ে ছিল। ’
জানে আলম কেনো এগিয়ে, সে ব্যাখ্যা দিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘১৯৭২ সালে জানে আলম আমাকে এবং ফিরোজ সাঁইকে নিয়ে জামালপুর সুগারমিলে বাণিজ্যিকভাবে গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে টিকেটের মূল্য ছিল মাত্র ৫ টাকা। আমি পেয়েছিলাম ৩০০ টাকা। কিন্তু সে এই অনুষ্ঠান থেকে কোনো লাভ করেছে বলে আমার মনে হয় না। এই যে কনসেপ্ট, সেসময় আমরা এটা জানতামও না, বুঝতামও না। তখন অর্থ আয় করা যেত শুধুমাত্র যাত্রাপালার মাধ্যমে, এছাড়া ঢাকা শহরের দুই একটা স্টেজ শোতে। কিন্তু গান গেয়ে গ্রামে-গঞ্জে কিংবা মফস্বল থেকে টাকা আয় করতে দেখিনি কাউকে। যেটা জানে আলমের হাত দিয়ে বিস্তার পেয়েছে। ’
‘তার মানি, এটা ছিল তার নেশা। এছাড়া এই জিনিসটাকে শিল্পকরন করাই তার ইচ্ছা ছিল। আরেকটা দিক হলো, ও নিজে দোয়েল প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠা করে, যেখান থেকে অনেক নামকরা শিল্পীর জন্ম হয়েছে। এটাও জানে আলম ভালোবাসা থেকেই প্রতিষ্ঠা করে। এই বিষয়গুলো আমরা করিনি। তাই আমি মনে করি জানে আলমের গান নিয়ে ভালোবাসা ও ব্যাপ্তিটা সবার চেয়ে বেশি ছিল। আমরা শুধু গেয়ে গেছি, কিন্তু জানে আলম একসঙ্গে গেয়েছে, গান নিয়ে ভেবেছে, কাজ করেছে,’ বললেন ফেরদৌস ওয়াহিদ।
তিনি আরও বলেন, ‘শেষ দিকে এসে, জানে আলম নিজে অজস্র গান করেছে। আমি আর ও অনেক স্টেজ শো করেছি। অনেক সময় দেখেছি, আমার চেয়ে তাকেই বেশি দর্শক-শ্রোতারা পছন্দ করেছেন, তার গানে বেশি তালি পড়েছে। তার সবচেয়ে বড় দিক হলো- সে গান গেয়ে গেছে নিয়মিত। কিন্তু আমার মনে হয় সে সঠিক মূল্যায়নটা পায়নি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২১
জেআইএম