বাংলা চলচ্চিত্র এখন ক্ষীণ আভার মতো। যেকোনো সময় সেই আভাটুকুও নিভে যেতে পারে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে ঠিক এভাবে বোঝাতে চাইলেও সেটি স্পষ্ট হবে না, এর সংকট আরো গভীরে। গত বছর সচল সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১১৫-র মতো। কিন্তু করোনার পরে হল খুলেছিল মাত্র ৫৭টি। সে সময় রাজধানীর মধুমিতা, বলাকা ও অভিসারের মতো বড় হলগুলো খোলেনি শুধু চলচ্চিত্র না থাকার কারণে। এখন সারা দেশে সচল সিনেমা হলের সংখ্যা আশির আশপাশে। অথচ ২০১৮-১৯ সালে হলের সংখ্যা ছিল তিন শর ঘরে।
দেশীয় চলচ্চিত্র শোচনীয় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছেই। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পর থেকে এই দিনটিকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটিকে কেন্দ্র করে হতাশার পাশাপাশি আশাবাদের কথা শোনা যাচ্ছে।
মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক এবং হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘হলের খরচ না এলে হল খুলব কেন? আমার বড় ভাই বলছেন হল রেখে লাভ নেই। আসলেই তো ব্যবসা হচ্ছে না, হল রেখে করবটা কী?’ তার মতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমা হল মালিকরাও হতাশ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যশোরের মণিহার সিনেমা হলের ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘দর্শক একেবারে কম। এভাবে একটা সিনেমা হল চালানো যায় না। চলচ্চিত্রের বিজনেসটা আসলে খুব খারাপ। ’
প্রত্যন্ত অঞ্চলের আরো কয়েকটি সিনেমা হলের ব্যবসার খোঁজ নেওয়া হয়েছিল। সৈয়দপুরের তামান্না, কোম্পানীগঞ্জের পূর্ণিমা, সিরাজগঞ্জের তালার রজনীগন্ধা, বগুড়ার সোনিয়া—এসব হলের কোনোটি থেকেই ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মোটকথা, বাংলা সিনেমা চলছে ধুঁকে ধুঁকে।
চলচ্চিত্রের ব্যবসা মন্দার কারণ হিসেবে অনেকেই তথ্য-প্রযুক্তিকে দায়ী করেন। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ অনেকেই। ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ভারতেও সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে, তাদের ব্যবসা সেই অর্থে কমছে না। ’ তিনি ব্যবসা বাড়াতে সিনেমা হলের পরিবেশ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলেন। দেশীয় চলচ্চিত্রের এ সমস্যা থেকে উত্তরণে এ রকম নানা মত পাওয়া যায়।
করোনা পরিস্থিতির পর গত অক্টোবরে সিনেমা হলগুলো আবার চালুর পর হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানির কথাও বলেছিলেন অনেকে। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়। তবে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসবে—এমন আশাবাদের কথা জানান প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খোসরু। খোসরু বলেন, ‘চলচ্চিত্র কোনো শিল্প ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি বিশাল অঙ্কের ঋণের ব্যবস্থা করায় বর্তমান চিত্র পাল্টে যাবে। প্রাথমিকভাবে সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণে ব্যয় করার পর চলচ্চিত্র তৈরির জন্যও বাজেট রয়েছে।
এদিকে চলচ্চিত্রের দুরবস্থার জন্য করোনা পরিস্থিতির ওপর দায় চাপিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তিনি জানান, ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর মতো বড় বড় বাজেটের বেশ কয়েকটি ছবি ঈদে মুক্তি পেতে যাচ্ছিল, এই সময়টাতেই করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেল। জায়েদ খান বলেন, ‘করোনার ঢেউ না এলে হয়তো চলচ্চিত্র ফের চাঙ্গা হয়ে উঠত। আমার নিজেরও দুটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। ’ তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সামনে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এখন দেখার বিষয় হলো, শিল্প ঘোষণা কিংবা বড় অঙ্কের ঋণ সুবিধার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র সত্যি ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২১
এমকেআর