ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

প্রমাণ মিললে মৌসুমী-সানীর ছেলে হবেন আসামি

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২১
প্রমাণ মিললে মৌসুমী-সানীর ছেলে হবেন আসামি বাবা ও মায়ের সঙ্গে স্বাধীন

ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে আরএম সেন্টারে ‘মন্টানা লাউঞ্জ’ রেস্তোরাঁয় নিষিদ্ধ মাদক সিসা ও সিসা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দসহ ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হওয়া ১১ জনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করেছে গুলশান থানা পুলিশ।  

তবে ওই মামলায় অবৈধ সিসা বার পরিচালনাকারী ও ‘মন্টানা লাউঞ্জ’ রেস্তোরাঁর মালিক ফারদিন এহসান স্বাধীনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

তিনি তারকা দম্পতি মৌসুমী ও ওমর সানীর ছেলে।

পুলিশ বলছে, সিসা একটি নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য। সিসা বার পরিচালনা, বিক্রি ও সেবন আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও নিষিদ্ধ। মন্টানা লাউঞ্জ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সিসা ও সিসা সেবনের সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার হওয়া ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন রেস্তোরাঁর সেফ (রাঁধুনি) এবং বাকিরা ওয়েটার হিসেবে সেখানে সিসা লাউঞ্জে কাজ করতেন। তবে অভিযানের সময় রেস্তোরাঁর মালিক ফারদিন এহসান স্বাধীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

এদিকে, বাবা ওমর সানীর দাবি, ওই রেস্তোরাঁটি মূলত ফুড আইটেম (খাবার) বিক্রি করা হতো। তবে সেখানে ৯০ শতাংশ ফুড আইটেম এবং ১০ শতাংশ সিসা লাউঞ্জ হিসেবে পরিচালিত হতো। রেস্তোরাঁটির মালিক ও তার ছেলে ফারদিন এহসান স্বাধীন কোনো বে-আইনি কাজ করেনি বলেও দাবি করেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গুলশানে মন্টানা লাউঞ্জ নামে একটি অবৈধ সিসা বারে অভিযান চালিয়ে সিসা ও সিসা সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ১১ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ’

সিসা বাব পরিচালনাকারী ও রেস্তোরাঁর মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে যাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে শুধুমাত্র তাদেরই আসামি করা হয়েছে। মামলাটি এখন তদন্তের বিষয়ে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ মিললে রেস্তোরাঁর মালিককেও আইনের আওতায় আনা হতে পারে। তবে মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। ’

এদিকে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (১৯ মে) দুপুরে ওমর সানী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিসা অবৈধ কি-না তা আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি সিগারেটে ১ দশমিক ৬ শতাংশ নিকোটিন থাকে। তবে সিগারেটের চেয়ে কম পরিমাণে সিসাতে নিকোটিন থাকে। আমাদের মূল ব্যবসা হচ্ছে রেস্তোরাঁয় খাবার বিক্রি করা। এরসঙ্গে মাত্র ১০ শতাংশ হচ্ছে সিসা লাউঞ্জ। গুলশান-বনানীর ট্র্যাডিশন (ঐতিহ্য) হিসেবে রেস্তোরাঁয় সিসা রাখতে হয়। এটি রেস্তোরাঁয় একটি সাপ্লিম্যান্ট হিসেবে চলে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এখন পুলিশ যদি আমাদের রেস্তোরাঁয় সিসা অফ (বন্ধ) করে দেয় তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু গুলশান বনানীসহ বাংলাদেশে অন্তত এক-দেড়শ (১০০ থেকে ১৫০) সিসা লাউঞ্জ বা সিসা বার রয়েছে। শুধু গুলশান ও বনানীতেই ৩০-৪০টি সিসা বার চলছে। তবে এগুলো সবই বন্ধ করা উচিত। সিসা বার অবৈধ হয়ে থাকলে আমি এগুলো চালাবো না। চালাতে চাই না। ’      

২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ কার্যকর হয়েছে। ওই নতুন আইনে সিসাকে মাদকদ্রব্যের ‘খ’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন আইনে মাদক সম্পর্কিত অপরাধ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও নগদ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সিসাকে নিষিদ্ধ মাদক হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে ও গোপনে সিসা বার পরিচালনা করে আসছে অসাধু রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। আইনে সিসা সেবন, বিক্রি ও সিসা বার পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও কেউ তোয়াক্কা করছেন না। তারা নানা কৌশলে নিষিদ্ধ সিসা কেনাবেচা অব্যাহত রেখেছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে অধিদফতরের পক্ষ থেকে গুলশান-বনানী ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে ও রেস্তোরাঁয় এবং সিসা লাউঞ্জে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে নিষিদ্ধ মাদক সিসা ও সিসা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধারসহ অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরও সিসা লাউঞ্জ বন্ধ হয়নি। গোপনে গোপনে বিভিন্ন নামি-দামি রেস্তোরাঁয় চলছে অবৈধ সিসা লাউঞ্জ।

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) মুকুল জ্যোতি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর সিসা মাদক হিসেবে তফসিলভুক্ত ছিল না। এরপর ২০১৮ সালে নতুন আইনে সিসা মাদক হিসেবে তফসিলভুক্ত হয়। ’

‘কিন্তু আইনের ব্যাখ্যায় বলা আছে, যদি সিসার মধ্যে ০ দশমিক ২ এর বেশি মাত্রায় নিকোটিন থাকে তবে তা মাদক হিসেবে গণ্য হবে এবং আইনের আওতায় পড়বে। আর নিকোটিনের পরিমাণ এর কম হলে সেটি আইনে বাইরে থাকবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছি। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতে রিট করেছে, যেন অহেতুক তাদের হয়রানী না করা হয়। তবে আমরা বিভিন্ন সিসা লাউঞ্জের নমুনা নিয়েছি। সেগুলো আমরা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। ওই প্রতিবেদন এলেই আমরা সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২১
এসজেএ/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।