নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নানা সময়ে অনিয়ম-অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে দেখা গেছে। সবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনিয়ম নিয়ে কিছু কথা সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বুধবার (১২ জানুয়ারি) কাওয়ালি কনসার্টে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এই ঘটনার ছবি-ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সামজিকমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন নির্মাতা ফারুকীও।
তিনি লেখেন, একটা পোস্ট দেখলাম, যেখানে বলা হচ্ছে কাওয়ালি বঙ্গবন্ধুও শুনতেন। আরেকটাতে দেখলাম, কাওয়ালি ভারত থেকে এসেছে। পোস্ট দুইটার পেছনে উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম, কাওয়ালি অনুষ্ঠানের বৈধতা তৈরি করা। কী দিন আসলো!
সম্প্রতি বাবা হয়েছেন এই নির্মাতা। তার স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও সন্তান দুজনেই ভালো আছেন। এই তারকা দম্পতি তাদের মেয়ের নাম রেখেছেন ইলহাম নুসরাত ফারুকী।
মেয়ের প্রসঙ্গে টেনে এই নির্মাতা লেখেন, আমার দিনরাত এখন ইলহামকে ঘিরে। ফলে ওর বাইরে দুনিয়াতে কী হচ্ছে তা জানার সময়ও পাই না। কিন্তু কখনো কখনো দুয়েকটা কথা না বলে পারা যায় না। কারণ এই দেশটাকে আমরা সবাই খুব ভালবাসি। ফলে দেশের মানুষদের মধ্যে যখন গোঁড়ামি দেখি, বুক ব্যথা করে। তখন মনে হয় কিছু কথা বলে যাই। আমরা একদিন থাকবো না, কিন্তু আমাদের সন্তানেরা থাকবে। তারা যেনো একটা সত্যিকারের সহনশীল সমাজ পায়। যেখানে মানুষজন সাদা-কালো চিন্তা না করে ক্রিটিক্যাল চিন্তা করার সুযোগ পায়। সেই ভাবনা থেকেই এই কয়টা কথা বলতেছি।
তিনি লেখেন, আমাদের দেশে প্রধানত দুইটা ধারা। একটা দাবি করা হচ্ছে সেক্যুলার বলে, আরেকটা রিলিজিয়াস। দুইটা ধারারই চিন্তা এবং ইন্টেলেকচুয়াল হাইট বেদনাদায়ক ভাবেই সমান। দুই দল থেকেই বছরের পর বছর মানুষজনকে ঘৃণার বিষ গিলানো হয়েছে। দুইটারই মন্ত্র এক- হয় তুমি সাদা, নয় কালো! হয় তুমি বন্ধু, নয় শত্রু। সাদা আর কালোর মাঝখানে যে গ্রে বলে একটা এরিয়া আছে সেটা আমাদের মাথায় মনে হয় আর নাই। ফলে ঢালাও ভালোবাসা আর ঢালাও ঘৃণা নিয়াই চলতেছে আমাদের এইসব দিনরাত্রি। যে কারণেই একদল কাওয়ালি শুনলেই তেড়ে আসে, আরেকদল হিন্দি শুনলেই যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠে।
ফারুকী আরও লেখেন, কিন্তু এটা আমাদের মাথায় ঢোকে না পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইয়াও আপনি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বা কাওয়ালি কিংবদন্তি ফরিদ আয়াজের গুণমুগ্ধ হতে পারেন। জমিদারি আমলে করা কলকাতা কেন্দ্রিক উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচারের নিন্দা করেও আপনি শিবকুমার শর্মা বা এ আর রহমানের ভক্ত হতে পারেন। কিন্তু এইসব একচোখা সাদাকালো বুদ্ধিজীবীতা কিংবা ধর্মীয় নেতাদের বয়ান আপনারে ক্রিটিকালি কিছু ভাবতে দেয় না, আপনি গ্রে এরিয়া দেখতে পারেন না। আপনি তখন হয় পক্ষে নয় বিপক্ষে থিওরির সাবস্ক্রাইবার হন। আপনি তখন "যে বিমান পাকিস্তানের ওপর দিয়ে যায়, সেই বিমানে চড়ি না" ধরনের বয়ান তৈরি করেন। কিংবা যদি বিপরীত পথের হন, তখন ভারতীয় দেখলেই আপনার অসহ্য লাগে, কিংবা মুসলমান হয়ে পূজায় বা বড়দিনে শুভেচ্ছা জানাইলে আপনার মাথায় রক্ত উঠে যায়।
তিনি যোগ করে লেখেন, এই বিগোট্রিই আমাদের জাতির বিকাশে প্রধান বাধা মনে হয় আমার কাছে। এটার চর্চা যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন আমাদের হয়তো কুয়ার ব্যাঙ হয়েই থাকতে হবে। এ বড় আশঙ্কার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এনএটি