ঢাকা: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
ফলে জায়েদ খানের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আহসানুল করীম।
নিপুণ আক্তারের আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (০৬ মার্চ) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন। আদালত চার সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়ে নিপুণকে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন। এছাড়া ৪ এপ্রিল শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন।
আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম ও আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী। নিপুণ আক্তারের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।
আদেশের পর আইনজীবী আহসানুল করীম বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন এবং উভয়পক্ষে স্থিতাবস্থা রক্ষা করার আদেশ দিয়েছেন। আমি কোর্টকে বলেছি-জায়েদ খানই অফিস চালিয়ে (সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন) আসছেন। তখন কোর্ট বললো-যেহেতু আপনি বসে গেছেন, আপনি চালাচ্ছেন, আপনিই চালিয়ে যাবেন।
পরে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত সিপি (লিভ টু আপিল) করতে বলেছেন। একইসঙ্গে পক্ষগণকে স্থিতাবস্থা অব্যাহত রাখতে।
তিনি বলেন, যদি হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত থাকে, তাহলে যে রায়ের ফলে তিনি (জায়েদ) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলতে চাচ্ছেন, এখন এ রায়ের তো কোনো কার্যকারিতা নাই। তার মানে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত বহাল। এর মানে আমার মক্কেল বর্তমানে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে কয়েক দফা রুল শুনানির পর ২ মার্চ জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জায়েদ খানই এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবেন বলে জানানো হয়।
জায়েদের রিটে জারি করা রুল যথাযথ করে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এরপর শুক্রবার (০৪ মার্চ) এফডিসিতে জায়েদ খান শপথ নেন। তাকে শপথবাক্য পাঠ করান শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন।
এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ রুল শুনানি শুরু হয়।
চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে, তার বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ আক্তার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ঘোষণা করেন।
এরপর থেকেই বিষয়টি ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে আসছেন জায়েদ খান। এরপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গণে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ আক্তারের নেতৃত্বে নতুন কমিটির একাংশ শপথগ্রহণ করে। পরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে নিজ নিজ পদের চেয়ারে বসেন তারা। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিল্পী সমিতির সদস্যরা। পরের দিন ৭ ফেব্রুয়ারি জায়েদ খান রিট করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করায় আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
আদেশে নিপুণ আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বোর্ডকে ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া চিঠির কার্যকারিতা এবং জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চিঠি এবং আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছেন আদালত। এছাড়া জায়েদ খানের দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের বাধা না দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ওই পদে দায়িত্ব পালনের ওপর ‘স্থিতাবস্থা’ দেন চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি পাঠিয়ে আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিপুণের আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ আদালতে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পেয়েছেন। তাই সিপি (লিভ টু আপিল) করবেন। এদিন আদালত শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন রাখেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের আদেশের ওপর চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ এবং স্থিতাবস্থা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রুল শুনানি করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত। সে অনুসারে রুল শুনানি শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২২
ইএস/জেআইএম