কবীর সুমনের প্রথম আধুনিক গানের অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’ প্রকাশ হয় ১৯৯২ সালে। বাংলা গানের গতিপথ বদলে দেওয়া এ অ্যালবাম প্রকাশের ৩০ বছর পূর্ণ হলো চলতি বছর।
এ উপলক্ষে ‘তোমাকে চাই-এর ৩০ বছর উদ্যাপন’ শিরোনামে গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে ঢাকায়। গত কয়েক দিনে এই অনুষ্ঠান নিয়ে নাটকীয়তা কম হয়নি। শুরুতে সুমনের গানের আয়োজনটি হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকিটও বিক্রি করেছিলেন আয়োজকেরা। কিন্তু আয়োজনের দুই দিন আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হওয়ায় জাতীয় জাদুঘরে এ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়নি। শুরু হয় সুমনের গান পরিবেশনা নিয়ে অনিশ্চয়তা।
তবে সব শঙ্কা কেটে যায় শুক্রবার (১৪ অক্টোবর)। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গানের আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) নির্ধারিত তারিখেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘তোমাকে চাই-এর ৩০ বছর উদ্যাপন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঠিক সোয়া ৫টায় মঞ্চে ওঠেন সুমন। এসময় দর্শকরা দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম রূপকারকে। তিনিও হাতজোড় গ্রহণ করলেন দর্শকদের সেই উষ্ণ অভ্যর্থনা।
এরপর প্রণাম জানিয়ে সুমন বলেন, ‘আমি ভারতের নাগরিক। আমার মাতৃভাষা বাংলা, যেটি এ দেশের রাষ্ট্রভাষা। এর চেয়ে গর্বের কিছু হতে পারে না। প্রথম বাংলাদেশে গান করতে এসেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। তখন আমার ৪৭ বছর বয়স। ’
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সুমন বলেন, ‘‘আমার প্রথম স্বরচিত, স্ব-সুর আরোপিত গানের অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’ যখন বেরিয়েছিল তখন আমার ৪৩ বছর বয়স। আমার প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড রবীন্দ্রনাথের গানের, যখন বেরিয়েছিল তখন আমার ২৩ বছর বয়স। আর আমার যখন ১৭ বছর বয়স তখন আমি আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে রবীন্দ্রসংগীত-আধুনিক গানের একটু উঁচু দিকের একজন গায়ক হিসেবে ঢুকেছি। আর নজরুলগীতিটা ওই সময় ভালো গাইতে পারিনি তাই ওটাতে আমি বি-গ্রেড পেয়েছিলাম। এই হচ্ছে মোটামুটি আমার গানের ক্যারিয়ার। ’
দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষমাণ দর্শক-শ্রোতার উদ্দেশে সুমন বলেন, ‘আপনারা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছেন, আমরা গান বাজনাটা শুরু করে দেই। আগে যতবার এসেছি আমি একাই এসেছিলাম, এখন আমি বুড়ো হয়েছি, উঠতে অসুবিধা হয়, বসতে অসুবিধা হয়, আমার সাহায্য দরকার হয়, হতেই পারে আমার বয়স হয়েছে। ’
নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে সুমন বলেন, ‘আমার একটা অসুখ হয়েছে, এটা স্নায়ুর অসুখ, এই অসুখের কারণে আমি যেমন হাতে লিখতে পারি না তেমনই গিটারও বাজাতে পারি না। আর কোনোদিন পারবো না। একটানা বসে থাকলেও সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় শুয়ে শুয়ে গান গাই! তবে এজন্য আমার আলাদা কোনো দুঃখ নেই। গুরুদের কৃপায় আমি এখনও একটু একটু গান গাইতে পারি, এটাই আনন্দ। ফলে আমার সঙ্গে বাজানোর জন্য বন্ধুদের দরকার হয়। ’
এরপর তার সফরসঙ্গী তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর কথা বলতে বলতে ‘একেকটা দিন’ শিরোনামের গান গাইতে শুরু করেন সুমন। তখনও হলরুম জুড়ে বেশ নীরবতা। গানটি শেষ হতেই কবীর সুমন কণ্ঠে তুললেন ‘সূর্যদয়ের আগে’ শিরোনামের আরেকটি গান। এরই মাঝে দর্শকদের করতালিতে মুখর হলরুম।
এরপর গান থামিয়ে সুমন দর্শকদের উদ্দেশে সুমন আবার বললেন, ‘আপনারা এতো শান্ত’। এরপর গাওয়া শুরু করেন ‘জাগে জাগে রাত’ শিরোনামের গান। গানটি শেষ হতেই মাগরিবের আজানের সময় হাত নেড়ে সবাইকে নীরব থাকার আহবান জানান শিল্পী।
এরপরেই আবারো নাটকীয়তা। আয়োজনের আধা ঘণ্টার মধ্যে অনুষ্ঠানস্থল থেকে আয়োজকরা বের করে দেয় গণমাধ্যমকর্মীদের! আয়োজকদের অসৌজন্য আচরণের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই বিষয়ে আয়োজকদের বক্তব্য এমন, সাংবাদিকদের আধাঘণ্টা সুযোগ দেওয়া হলো সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও ফুটেজের জন্য। তারা তো টিকিট কাটা দর্শক নন। ফলে তাদের উপস্থিতির কারণে টিকিট-কাটা দর্শকদের সংগীত উপভোগে ব্যাঘাত ঘটবে!
কবীর সুমন এই আয়োজন চলবে আরো দুদিন ১৮ ও ২১ অক্টোবর। এই দু্ই দিনে সুমন গাইবেন খেয়াল ও আধুনিক গান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
এনএটি