‘প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি জানালায় হাসিমুখ হাসিমুখে আনন্দধারা... তুমি চেয়ে আছো তাই আমি পথে হেঁটে যাই... হেঁটে হেঁটে বহু দূর বহু দূর যেতে চাই...’। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের কাছে এটি একটি তুমুল জনপ্রিয় গান।
শিরোনামহীন ব্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সময়টা ছিল ১৯৯৬ সাল। টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, হাকিম চত্বর আর আর্টস ক্যাফেটেরিয়ার আড্ডায় কয়েকজন সঙ্গীতপ্রেমী তরুণ খালি গলায় গান গাইতে গাইতেও একসময় সিদ্ধান্ত নেয় ব্যান্ড গঠনের। প্রথমে গান গাওয়া হতো টেবিল চাপড়ে, এরপর একটা অ্যাকুয়েস্টিক গিটার, একটা কি-বোর্ড; এভাবেই আস্তে আস্তে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যান্ডে রূপান্তরিত হয় শিরোনামহীন। ‘মিলেনিয়াম ইয়ার’ ২০০০ সালে সম্পূর্ণ ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে নতুন করে শুরু করে শিরোনামহীন।
পদাতিক নাট্য সংসদের সঙ্গে প্রথম স্টেজ পারফর্ম করে শিরোনামহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পদাতিকের একটি নাটক প্রদর্শনীর আগে গান গাইতে উঠে দর্শকদের মাতিয়ে দেয় ব্যান্ডটি। এরপর ক্যাম্পাসের ছোট-বড় প্রোগ্রামে একের পর এক ডাক পেতে থাকে শিরোনামহীন। বেশ দ্রুতই ব্যান্ডটির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে দেশ জুড়ে।
এ পর্যন্ত শিরোনামহীনের চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম অ্যালবাম ‘জাহাজী’ বের হয় ২০০৩ সালে। প্রথম অ্যালবামেই তারা দেখা পায় সাফল্যের। দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ইচ্ছে ঘুড়ি’ বের হয় ২০০৫ সালে আর তৃতীয় অ্যালবাম ‘বন্ধ জানালা’ বের হয় ২০০৯। শিরোনামহীনের চতুর্থ অ্যালবামটি ছিল একটি ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। ২০১০ সালে বের হওয়া এ অ্যালবামের নাম ‘রবীন্দ্রনাথ’। হ্যাঁ, কেবল রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে বাংলাদেশে কোনো ব্যান্ডের এটিই ছিল প্রথম অ্যালাবাম। নিঃসন্দেহে এটি ছিল এক দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। সাফল্যের সঙ্গেই এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে তারা। নতুন আমেজে গাওয়া শিরোনামহীনের রবীন্দ্রসঙ্গীত নতুন প্রজন্মের শ্রোতারা সানন্দে গ্রহণ করে।
শিরোনামহীনের ভক্তদের জন্য আনন্দের সংবাদ হল, এই বৈশাখে নতুন অ্যালবাম নিয়ে আসছে তাদের প্রিয় ব্যান্ডটি। এটি হচ্ছে শিরোনামহীন পঞ্চম অ্যালবাম। ব্যান্ডের নামেই থাকছে অ্যালবামের নাম, শিরোনামহীন। এরই মধ্যে অ্যালবামটির সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন অ্যালবামটি পৌঁছে যাবে শ্রোতাদের হাতে। ‘আবার হাসিমুখ’, ‘আচ্ছা ঠিক আছে’, ‘বৃষ্টিকাব্য’, ‘পরী’, ‘র্যাগ’, ‘ট্রিবিউট টু আজম খান’, ‘কিছু কথা’সহ ১০টি গান থাকছে এই অ্যালবামে। শিরোনামহীনের সদস্যদের কথা ও সুর করা এই গানগুলোর পাশাপাশি থাকবে যন্ত্রসংগীতও।
শিরোনামহীনের ভোকাল তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই চাই আমাদের গানে বিশেষত্ব নিয়ে আসতে। এরই মধ্যে শিরোনামহীন তার গানে স্বতন্ত্র একটা স্টাইল তৈরি করেছে বলে মনে করি। আগের অ্যালবামটির মতোই এবারও সেই স্টাইলটি আমরা অনুসরণ করেছি। পাশাপাশি নতুন কিছু তো থাকছেই। আমাদের ফ্যানদের চমক দেওয়ার জন্য তা আপাতত বলতে চাচ্ছি না। ’
শিরোনামহীনের আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তুহিন বলেন, ‘এদেশের গান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের আছে একটা দীর্ঘ পরিকল্পনা। ধীরে ধীরে আমরা গান দিয়ে ওয়ার্ল্ড মিউজিকে জায়গা করে নিতে চাই। ব্যান্ড মিউজিকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিন্তু অনেক এগিয়ে গেছে। সত্যি বলতে কি গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে আর কোনো দেশই বাংলাদেশের মতো ব্যান্ড মিউজিকে এতটা ভালো করতে পারেনি। আমাদের তুলনায় অনেক নিচে তাদের অবস্থান। কাজেই আমাদের ব্যান্ড মিউজিকের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। আমরা চাই গানের মধ্য দিয়ে সবার মধ্যে একটা সচেতন মন তৈরি করতে। গানে বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে ব্যবহার করাটা খুব জরুরি। এ ব্যাপারটাও প্রতিষ্ঠিত করতে চাই আমরা। সবচেয়ে বড় কথা হল গানটাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। ’
শিরোনামহীনের বর্তমান লাইন আপ হলো তানজির চৌধুরী তুহিন (ভোকাল), জিয়াউর রহমান জিয়া (বেইসগিটার), রাসেল কবির (কি-বোর্ড), শাফিন আহমেদ (ড্রামস), দিয়াত খান (গিটার)।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫, মার্চ ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: বিপুল হাসান, বিনোদন সম্পাদক/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর