মৌলভীবাজার: মাত্রাতিরিক্ত পর্যটকের চাপে বিপন্ন হয়ে পড়ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এখানে বসবাসরত বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের প্রাকৃতিক বনের নিস্তব্ধতা।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি শুক্রবার থেকে রোববার (২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর) ছিল দুদিন সাপ্তাহিক এবং একদিন বড়দিনের বন্ধ। টানা তিন দিনের ছুটিতে দৈনিক প্রায় আট থেকে ১০ হাজার পর্যটক সংরক্ষিত এই জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করেন। ফলে নিরাপত্তাহীন এবং শঙ্কিত হয়ে পড়ে লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণীরা।
অভিযোগ উঠেছে, দর্শনার্থীদের এই অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যেই বন থেকে বেরিয়ে একটি গন্ধগোকুল গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়। সড়কে ধরা পড়েছে একটি অজগর। সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকের চাপ বেড়েছে লাউয়াছড়ায়। ফলে বিরক্ত ও বিভ্রান্ত প্রাণীকূল।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) একটি অজগর বেরিয়ে মানুষের হাতে ধরা পড়ে। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) একটি গন্ধগোকুল সড়কে মারা যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের লাউয়াছড়া সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান। এটি দেশের অন্যতম মিশ্রচিরহরিৎ বন। দুর্লভ প্রাণবৈচিত্র্য ও উদ্ভিদের জন্য এই বনটি গুরুত্বপূর্ণ। এই বনে রয়েছে বিশ্বজুড়ে মহাবিপন্ন প্রজাতির উল্লুক। রয়েছে বিপন্ন চশমাপরা হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, মায়া হরিণসহ নানা প্রজাতির বিরল সব বন্যপ্রাণী।
শ্রীমঙ্গল অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, সোমবার ভোরের কোনো এক সময়ে লাউয়াছড়া থেকে বেরিয়ে পড়ে একটি গন্ধগোকুল। শ্রীমঙ্গল উপজেলার নওয়াগাঁও এলাকায় সড়ক পারাপারের সময় গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যায় বন্যপ্রাণীটি। এলাকাবাসী দেখে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনকে খবর দেন। পরে মরদেহ বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আগের দিনও একটি অজগর লোকালয়ে ধরা পড়ে। মানুষজন খবর দিলে সেটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান সজল।
যখনই লাউয়াছড়ায় পর্যটকের চাপ বাড়ে। তখনই বন্যপ্রাণী বিরক্ত হয়ে বন থেকে বেরিয়ে পড়ে। অনেক প্রাণী মারা যায় বা আহত হয়। বন্যপ্রাণী লোকালয়ে দেখলে এখন প্রায়ই মানুষ খবর দেয়। আবার অনেকে হয়তো যোগাযোগের নাম্বার জানে না। অনেকে খবর দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করে না। যে কারণে সব প্রাণীর আহত বা মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায় না। তবে এটা এলার্মিং বলে মনে করেন স্বপন দেব সজল। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই বন্যপ্রাণী লোকালয়ে বেরিয়ে আহত বা মারা যাচ্ছে বলে জানান স্বপন দেব সজল।
প্রকৃতিপ্রেমী শায়লা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা পর্যটক তারা এখনো জানিনা বনে কিভাবে পরিভ্রমণ করতে হয়। যতই নির্দেশনা লেখা থাক পড়ার সময় আমাদের হয় না। তাই অন্য সব দর্শনীয় স্থানগুলোর মতো এই সংরক্ষিত বনেও একই হৈ-হুল্লোড় করি। নির্দিষ্ট ট্রেইল এ পর্যটক চলবে এইটা নিশ্চিত করবে বনবিভাগ তা কতটুকু করে জানি না। আমাদের এই প্রাকৃতিক বনটির প্রকৃতির হাতেই সবসময় ছেড়ে দিতে হবে। কৃত্রিম কিছু, বনের ক্ষতি হয় এমন কিছু করতে গেলেই বন এবং বনকে কেন্দ্র করে বসবাস করা নানান ধরনের জীববৈচিত্র্যরা তা সহ্য করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আর খাবার না পেলে বন্যপ্রাণী বনের বাইরে আসবেই। আর বনের রাস্তায় যে নিয়মে গাড়ি চলার কথা তার যেহেতু নিয়ন্ত্রণ নাই, তাই বহু মূল্যবান আমাদের এই বন্যপ্রাণীগুলো মারা পড়বে, আহত হবে আমরা অসহায়ের মতো দেখি। বন উজার, গুল্মলতা কেটে নেওয়া, বনে ঝাড়ু দিয়ে পাতা কুড়ানো, ছন পুড়ানো এগুলো কবে বন্ধ করতে পারবো আমরা কি কেউ জানি?
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
বিবিবি/আরএ