ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কেশর আছে বলে এর নাম ‘সিংহ বানর’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
কেশর আছে বলে এর নাম ‘সিংহ বানর’  লাউয়াছড়ার সিংহ বানর। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: অন্য সাধারণ বানরের মতো নয়। আকারে-আকৃতিতে এরা কিছুটা বড়।

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের গলার ওপরের দিকের মুখমণ্ডলের অংশে রয়েছে কেশরের শোভা। বনের রাজা সিংহের মতো কেশর ততটা গাঢ় নয়, হালকা। এই কেশরের বিচিত্র উপস্থিতির জন্য এ প্রজাতির বাননের নামকরণ ‘সিংহ বানর’।
 
কেশরওয়ালা সিংহ বানর আমাদের চিরসবুজ প্রাকৃতিক বনের আদি বাসিন্দা। তবে বনের পরিবেশ ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে যাওয়ায় তারাও ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। ছোটলেজি বানর এরই মধ্যে চিরসবুজ বন ও খাদ্য সংকটে বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবুও মাঝেমধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ প্রজাতির বানরের এখনো দেখা পাওয়া যায়।

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মিলেছে ‘সংকটাপন্ন’ কেশরওয়ালা সিংহ বানরের। তাদের দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে। গাছে গাছে ডালে ডালে তাদের বিচরণ। কখনো একা। কখনো দ্বৈত। আবার কখনো দলগত।  

এ প্রজাতির বানরগুলো সচরাচর দেখা যায় না। তাদের গায়ের রং হালকা সোনালি থেকে বাদামি। দূর থেকে সবুজের মাঝে দারুণ এক সৌন্দর্য ছড়ায়।  

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক(এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্রা বলেন, ‘সংকটাপন্ন’ তালিকাভুক্ত প্রাণী সিংহ বানর। এদের ইংরেজি নাম Northern pig-tailed macaque আর বৈজ্ঞানিক নাম Macaca leonina. কেশর আছে বলেই এ বানরের নাম সিংহ বানর। আমাদের লাউয়াছড়ায় ওরা বেশ ভালোভাবেই আছে। এ বানরের ছোট–বড় মিলিয়ে একটি বড় দল এখানে বাস করছে। সংকটাপন্ন বলে অন্যান্য প্রাণীর মতো বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের এদের ওপরও সতর্কতামূলক নজরদারি রয়েছে।  

এদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, সিংহ বানরের নাকের আগা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৪০-৬০ সেন্টিমিটার এবং লেজ ১৮-২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৪ দশমিক ৫ থেকে ১২ কেজি। সিংহ বানরের লেজের বৈশিষ্ট রয়েছে। এদের লেজ দেখতে শুকরের মতো। অন্য বানরের লেজ নিচের দিকে নোয়ানো থাকলেও এদের লেজ পিঠের দিকে উল্টিয়ে খাড়া করে রাখে। একজোড়া মধ্যপার্শ্বীয় সাদা রঙের অংশ লেজের গোড়ায় থাকে। স্ত্রী বানর পুরুষের চেয়ে ছোট আকৃতির। প্রজননের পর ১৬২ থেকে ১৮৬ দিন পর স্ত্রী বানর একটি বাচ্চা দেয়।  

খাদ্যতালিকা সম্পর্কে জানান, এ প্রজাতির বানরগুলো দিবাচর এবং বৃক্ষবাসী। তবে মাঝে মাঝে সমতল ভূমিতে বিচরণ করতে দেখা যায়। এই প্রজাতির বানর গভীর সবুজ বনে বাস করে। এদের খাদ্যতালিকায় ফল, মূল, কচি পাতা, কুঁড়ি, কীটপতঙ্গ, কাঁকড়া, পাখির বাচ্চা ইত্যাদি খায়। খাদ্যাভাবে কখনো কখনো শস্য খেতেও হানা দেয়। এদের গড় আয়ু ১০ থেকে ১২ বছর।

এদের অবস্থান সম্পর্কে শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ছাড়াও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এই প্রজাতির বানর দেখা যায়। দেহের ওপরের লোম জলপাই-ধূসর, নিচটা ধূসর-সাদা ও মুখমণ্ডল গোলাপি। মাথার মাঝখানটা চ্যাপ্টা ও সেখানকার লোম কালচে। পুরুষ, স্ত্রী ও বাচ্চা মিলে ২০ থেকে ২৫টি বানর দল বেঁধে বাস করে। বয়স্ক বানরের মাথায় বা দলনেতার মাথায় কখনো কখনো সিংহের মতো কেশর দেখা যায়।  

সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনে থাকে। শক্তসমর্থ পুরুষের নেতৃত্বে স্ত্রী, পুরুষ ও বাচ্চা মিলে ৫ থেকে ২৫টির দলে বাস করে। পুরুষ বেশ রাগী; কাউকে ভয় দেখানোর জন্য দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ভেংচি কাটে। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। স্ত্রী তুলনামূলকভাবে শান্ত বলে জানান এ বন কর্মকর্তা।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের লাল তালিকায় এ প্রজাতিকে ‘সঙ্কটাপন্ন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এ প্রাণীটি সংরক্ষিত।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।