মৌলভীবাজার: ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে পড়ছে আমাদের পাহাড়ি প্রকৃতি এবং চা-বাগান। বিভিন্ন কারণে প্রকৃতির এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে গিয়ে আজ হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার বসবাসরত বন্যপ্রাণীরা।
পাহাড়ি এলাকা এবং চা শিল্পাঞ্চলে একটি বিশেষ প্রজাতির প্রাণী এক সময় প্রায়ই দেখা যেতো। ভোরে এবং শেষ বিকেলের আলো নিভে এলে এই প্রাণীটি খাদ্যের সন্ধানে বের হতো। চা বাগানের সেকশনে কর্মরত চা-শ্রমিকরাও এই প্রাণীটির দেখা পেতেন তখন। কিন্তু পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে পাহাড়ি এলাকায় এখন আর এ প্রাণীটি তেমনভাবে দেখা যায় না। ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ওরা।
বিলুপ্তির দিকে চলে যাওয়া এই বিশেষ প্রাণীটির নাম ‘বুনো খরগোশ’। বর্তমানে এরা অত্যন্ত বিরল বা দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী। সম্প্রতি চা-বাগান এলাকা থেকে এর ছবিটি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রায় চার মাসের নিরলস প্রচেষ্টার পর হঠাৎ খরগোশটির দেখা পাওয়া গেল।
বুনো খরগোশ প্রসঙ্গে চা বাগানের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেই তারা বলেন, এখনতো দেখা যায় না বাবু, আগে দেখতাম, অনেক দিন ধরে দেখি না, এমন বাক্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু সংকল্প টুকরো দানা বাঁধে মনে। যেভাবেই হোক বুনো খরগোশের ছবি ধারণ করতেই হবে। টার্গেটে ছিল ৩০ দিনের। প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই চা-বাগানের খরগোশ বিচরণের স্থানগুলোতে (যেখানে বুনো খরগোশ আগে ঘুরে বেড়াতো বলে চা শ্রমিকরা দেখেছেন) যাওয়া হয়েছে। কিন্তু ছবি তোলা তো বহু দূরের কথা, তার দেখাই পাওয়া যায়নি।
আরও ৩০ দিনের টার্গেট নিয়ে সকাল-বিকেল যাওয়া হলো। এভাবে তার সন্ধানে দিনের পর দিন চষে বেড়াতে বেড়াতে সম্প্রতি বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বুনো খরগোশের দেখা পাওয়া গেল, ছবিও তোলা হলো। কী যে আনন্দ তখন! প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসা একটি বিশেষ প্রজাতির প্রাণীর ছবি ক্যামেরাবন্দি হলো।
এরা যে অত্যন্ত ভীতু প্রকৃতির প্রাণী তা উপলব্ধি করা গেল মাত্র ২/৩ সেকেন্ডেই! এই ক্ষুদ্র সময়টুকুই ছিল তার অবস্থানের ক্ষণ। পর মুহূর্তেই দ্রুত চাগাছের তলে লুকিয়ে পড়ে নিজেকে নিরাপদে নিয়ে যায় সে।
বুনো খরগোশের ইংরেজি নাম Indian Hare এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lepus nigricollis। এরা দৈর্ঘ্যে লেজসহ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। আকৃতির ভিন্নতায় এদের ওজন প্রায় দেড় থেকে সাত কেজি হয়ে থাকে। এদের দেহের ওপর ধূসর এবং বাদামি রঙের ছাপ। মাঝে মাঝে কালচে দাগও রয়েছে। এদের কান বেশ লম্বা, চোখের বৃত্ত বড় এবং লেজটি খাটো। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে দুর্বা ঘাসসহ অন্যান্য প্রজাতির ঘাস, গাছের পাতা, ফল, পাতাযুক্ত সবজি, শস্যদানা প্রভৃতি।
এ প্রাণী সম্পর্কে চা-বাগানের এলাকার শ্রমিক লছমন বলেন, আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও বাগানে প্রায় প্রতিদিনই বুনো খরগোশ দেখতে পেতাম। খুব ভোরে এবং বিকেলে ওরা চা-গাছের নিচে ঘাস খেতে মাটির গর্ত থেকে বের হয়ে আসতো। কিন্তু এখন অনেক দিন হয়, চা বাগানে একটি খরগোশও দেখিনি। কোথায় গেল সেগুলো?
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
বিবিবি/এএটি