ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হারিয়ে যাওয়াদের গল্প...

সাজিদুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১২
হারিয়ে যাওয়াদের গল্প...

ঢাকা: প্রকৃতিতে কতো প্রাণীই আমরা প্রতিনিয়ত দেখে থাকি। এমন অনেক প্রাণীই আছে যেগুলো এক সময় দোর্দণ্ড প্রতাপে বসবাস করলেও কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে প্রকৃতির কোল থেকে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ মানুষ। মানুষের রসনার শিকার হয়ে বিলুপ্ত হওয়া এমন কয়েকটি প্রাণী সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা’Thylacinus
প্রবাদ আছে ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা’। কিন্তু আমরা কি জানি এই ঘোগ আসলে কি? ঘোগ নামে যে একটি প্রাণী আসলেই যে ছিলো তা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। ইংরেজিতে Thylacine নামে পরিচিত এ প্রাণীটির আরেক নাম তাসমানিয়ান টাইগার। ১৯৩৬ সাল থেকেই এটিকে বিলুপ্ত প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মাংসাশী এই প্রাণীটিকে নিয়ে বাংলায় প্রবাদ থাকলেও এর আদি নিবাস বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। সুদুর অস্ট্রেলিয়ায়। তবে আদি নিবাস থেকে এ প্রাণীটি প্রায় ২ হাজার বছর আগে থেকেই ‘বিলুপ্ত প্রায়’ পর্যায়ে চলে যায়।  

মূলত অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপের উপনিবেশ স্থাপনের পর থেকেই প্রাণীটি হারিয়ে যেতে থাকে। তবে তাসমানিয়া দ্বীপাঞ্চলে এটি টিকে থাকার চেষ্টা করলেও আদিবাসী ও হিংস্র ডিংগো কুকুরের কারণে তা সম্ভব হয়নি। মজার বিষয় হলো অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পরিচিত প্রাণী ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে এর একটি মিল রয়েছে। আর সেটি হলো এই দুটি প্রাণীই marsupial অর্থাৎ উপজঠরী। ক্যাঙ্গারুর মতো এরাও তাদের বাচ্চা পরিণত হওয়ার আগে থলিতে বহন করতো। বর্তমানে কিছু যাদুঘরে মমি হিসেবে প্রদর্শিত ছাড়া বাস্তবে এ প্রাণীটিকে আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।

অদ্ভুত প্রাণী ‘জেড়া’Quagga
সুকুমার ‍রায়ের ‘হাতিমি’ ‘বকচ্ছপ’ ‘হাঁসজারু’র কথা আমরা জানি। কিন্তু ‘জেড়া’ (অর্ধেক জেব্রা আর অর্ধেক ঘোড়া) নামের কোনো প্রাণীর নাম মনে হয় আমরা সুকুমার রায়ের কাছ থেকে শুনিনি। সুকুমার রায়ের অদ্ভুত নামের ওই প্রাণীগুলো বইয়ের পাতায় পাওয়া গেলেও বাস্তবে কেউ দেখেনি এটা নিশ্চিত বলা যায়। তবে আমাদের এই ‘জেড়া’ নামের প্রাণীটি কিন্তু বাস্তবে ছিলো। কুয়েগা নামের আফ্রিকান এ প্রাণীটি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অঙ্গরাজ্যে একসময় প্রতাপের সঙ্গে বসবাস করতো। কিন্তু মানুষের রসনার শিকার এ প্রাণীটি ১৮৮৩ সাল থেকে বিলুপ্ত।

প্রাণীটির শরীরের অর্ধেক জেব্রার আর বাকিটুকু ঘোড়ার মতো বলে অনেকেই একে জেব্রা প্রজাতির উপ-প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করলেও আধুনিক সময়ে এটিকে ‍আলাদা একটি প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে গড়া এ প্রজাতির শেষ বংশধরটি ১৮৮৩ সালের ১২ আগস্ট আমস্টারডামের আর্টিস ম্যাগিস্ট্রা চিড়িয়াখানায় মারা যায়।

হারিয়ে গেছে ‘গ্রেট অক’Keulemans-GreatAuk
‘গ্রেট অক’ হচ্ছে পেঙ্গুইন প্রজাতির সর্বশেষ বিলুপ্ত প্রাণী। আটলান্টিক মহাসাগরের এ প্রাণীটিকে ১৮৪৪ সালে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ৩০-৩৪ ইঞ্চি লম্বা ‘উড়তে না পারা’ এ অক প্রজাতির প্রাণীটির গড় ওজন ছিলো প্রায় পাঁচ কেজি। কানাডার পূর্বাঞ্চলীয় দ্বীপ, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও গ্রেট বৃটেনে এদেরকে প্রচুর পরিমানে দেখা যেতো। মাংসের জন্য এ প্রাণীটিকে মানুষের নির্মম রসনার শিকার হয়ে হারিয়ে যেতে হয়েছে।

বিলুপ্তির প্রতীক ‘ডোডো’
ইংরেজিতে প্রবাদ রয়েছে "as dead as a dodo"। অর্থ্যাৎ নিশ্চিত মৃত্যু। কিংবা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বোঝাতে ইংরেজিতে ব্যবহার করা হয় "to go the way of the dodo"।

Dodo‍১৭’শ সালের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে শেষ ভাগের দিকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘উড়তে না পারা পাখি’ ডোডো’র পরিণতির সঙ্গে মিল রেখেই উপরের প্রবাদ দুটি তৈরী হয়েছে। মরিশাস দীপপুঞ্জের বাসিন্দা এ পাখিটির বিলুপ্তির কারণও মানুষ।

১৫৯৮ সালে ডাচ নাবিকদের কাছ থেকেই প্রথম এই পাখিটির সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু পরে নাবিকদের ক্ষুধার কাছেই চিরদিনের জন্য হার মানতে হয় ডোডোদের। ১৯ শতক পর্যন্ত এই পাখিটিকে একটি পৌরাণিক চরিত্র হিসেবেই দেখা হতো। পরবর্তীতে ইউরোপে এ পাখির চারটি নমুনা নিয়ে গবেষণা করা হয়। যদিও তখন সময় শেষ। কারণ আরো গবেষণার জন্য ডোডোর বংশধররা কেউই বেঁচে ছিলো না। পরে মরিশাস থেকে এর ফসিল এনে গবেষণা করা হয়।

১৮৬৫ সালে ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস লুডউইজ ডজসান (লুইস ক্যারল ছদ্মনামে পরিচিত) ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ গল্পে ডোডোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা এর নাম আরও ছড়িয়ে দেয়। বিলুপ্তি ও বিলোপ প্রবণতার প্রতীক হিসেবে ডোডো বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এছাড়া মরিশাসের প্রতীক হিসেবে এই হারিয়ে যাওয়া পাখিকে প্রায়শই ব্যবহার করা হয়।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১২
এসএইচ/সম্পাদনা: শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।