ঢাকা, রবিবার, ৯ চৈত্র ১৪৩১, ২৩ মার্চ ২০২৫, ২২ রমজান ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কাঁঠালের কিছু মুচি কালো হয়ে ঝরে যায় কেন?

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
কাঁঠালের কিছু মুচি কালো হয়ে ঝরে যায় কেন? ছোট কালো মুচি হচ্ছে কাঁঠালের পুরুষ ফুল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ধীরে ধীরে কাঁঠালের মৌসুম চলে আসছে। কাঁঠাল গাছের দিকে তাকালেই দেখা যায় ডালের অংশে বা কাণ্ডে গজিয়ে উঠেছে ফল সম্ভার।

আবার কোনো কোনো কাঁঠাল গাছে দেখা যায় খুব কম ফলে ভরে উঠেছে। কাঁঠাল গাছে মাঝেমধ্যে দেখা যায়, কালো কালো ছোট কাঁঠাল! কাঁঠালের পরাগায়ন হওয়ার জন্য দুই ধরনের ফুল লাগে। একটি স্ত্রী ফুল আরেকটি পুরুষ ফুল। পরাগায়নের পর স্ত্রী ফুল ধীরে ধীরে কাঁঠালে রূপান্তরিত হয়। আর পুরুষ ফুলগুলো কালো হয়ে পচে যায়।

কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus এবং প্রচলিত ইংরেজি নাম জ্যাকফ্রুট Jackfruit। এটি হলুদ বর্ণের গ্রীষ্মকালীন সুমিষ্ট ফল। বাংলাদেশের ‘জাতীয় ফল’ কাঁঠাল। জাতীয় এই ফল খাদ্য হিসেবে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কাঁঠাল সবজি বা তরকারি হিসেবে অত্যন্ত সুস্বাদু, পরিপূর্ণ পাকা কাঁঠালের মতোই। কাঁচা কাঁঠালের কান্দা বা এঁচোড় সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী।

ভোজনরসিকদের কাছে কাঁচা বা পাকা সব কাঁঠালেরই চাহিদা ব্যাপক। পাকা কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর হলেও এর ব্যতিক্রমী গন্ধের জন্য অনেকের কাছে ততটা আকর্ষণীয় নয়। তারপরও মৃদু অম্লযুক্ত সুমিষ্ট স্বাদের হওয়ায় অনেকে খেতে খুব পছন্দ করেন। কাঁঠালের বীজগুলোকে শুকিয়ে বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে খাওয়া হয়। বিচিগুলো পিষে বাদাম, দারুচিনি, কিসমিস মিশিয়ে মজাদার হালুয়া বানিয়েও খাওয়া হয়। তাছাড়া হালকা ভেজেও খেতে দারুণ।

কাঁঠালের কিছু মুচি কালো হয়ে ঝরে যায় কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কাঁঠালে পরাগায়ন হওয়ার জন্য দুই ধরনের ফুল লাগে। স্ত্রী ও পুরুষ ফুল। পুরুষ ফুলগুলো ফোঁটার পরে কালো হয়ে পচে ঝরে যায়। আর স্ত্রী ফুলগুলো যদি পুরুষ ফুলের কাছে থেকে পোলেনগ্যান (পরাগরেণু) রিসিভ করে পোলেনেশর (পরাগায়ন) হয় তখন সেটা কাঁঠাল হয়। পুরুষ ফুল থেকে পরাগ রেণুগুলো স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে গিয়ে পড়ে। তখন পরাগায়ন হয়। পরাগায়নের পর সেই স্ত্রী ফুলটি ধীরে ধীরে কাঁঠালে রূপান্তরিত হয়।

ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, কাঁঠাল হলো যৌগিক ফল। এখানে অনেকগুলো ফুল রয়েছে। ধরা যায় কম্পাউন্ড। মানে এখানে অনেক ফুলের সমষ্টি। কাঁঠালের ভেতরে অনেক কোয়া থাকে। আর একেকটা কোয়া একেকটা ফুল থেকে এসেছে। সব একটা দণ্ডের চতুর্দিকে সাজানো থাকে। যেটা পরাগায়ন হয় না সেটা বীজ হয় না। মানে কোয়া হয় না।

ছোট কালো কাঁঠাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছোট কালো কালো যে ফুলগুলো পচে যাচ্ছে এটাকে ‘মুচি’ বলে। এগুলো কাঁঠালের মেইল ফ্লাওয়ার (পুরুষ ফুল)। এই মেইল ফ্লাওয়ার থেকে পরাগ রেণুগুলো স্ত্রী কাঁঠাল ফুলের গায়ে গিয়ে পড়ে। যেসব গর্ভমুণ্ডগুলো পরাগায়ন হয় সেখান থেকেই কাঁঠাল হয়। আবার কোনো কোনো কাঁঠাল উঁচু-নিচু হয়। এর কারণ হলো কাঁঠালের যে অংশটা পরাগায়ন হয়নি সে অংশটা নিচু হয়। মানে ওখানে কোনো কোয়া বা বীজ নেই।

‘স্ত্রী ফুলের গায়ে পাউডার বা রেণু থাকে না। ছোট ছোট লোমের মতো অংশগুলো হলো গর্ভমুণ্ড। পুরুষ ফুল থেকে পাউডারগুলো বা পরাগরেণুগুলো স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডের গায়ে লাগে। তখনই মিলন হয় এবং সেই স্ত্রী ফুলটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি কাঁঠালে রূপান্তরিত হয়। ’

কাঁঠালের পুরুষ ফুল থেকে স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন বাতাস, মৌমাছি, পিঁপড়া, কীট প্রভৃতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। মোট কথা হচ্ছে, এই পরাগায়নটা বাহকের মাধ্যমে হয় বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।