জাবি: ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শুক্রবার ৭ ডিসেম্বর হতে যাচ্ছে ‘প্রজাপতি মেলা-২০১২’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ‘কীটতত্ত্ব’ শাখার আয়োজনে এ মেলা হবে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে।
মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘প্রজাপতি মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি প্রদর্শন করা হবে। ’’
দিনব্যাপী এ মেলায় থাকছে শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতি আদলের ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য প্রজাপতি মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. হুমায়ুন কবিরকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হবে।
মেলায় শিশুদের জন্য জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খালেদ হোসাইন রচিত বই ‘ছন্দে ছড়ায় প্রজাপতি’র মোড়ক উম্মোচন করা হবে। বইটিতে ৪০ প্রজাতির প্রজাপতির ছবি ও তথ্যসহ ৪০টি ছড়া রয়েছে বলে জানান তিনি।
মেলা উপলক্ষে দৃষ্টিনন্দন এ পতঙ্গটির বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাদে ও বিভাগের সামনের বাগানে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে ‘প্রজাপতি ঘর’। এ প্রজাপতি ঘরে কৃত্রিমভাবে প্রজাপতির প্রজনন ঘটিয়ে ক্যম্পাসে অবমুক্ত করা হচ্ছে, যা ক্যম্পাসের সৌন্দর্য্য আরো বৃদ্ধি করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নিরলসভাবে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করছেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম এ গবেষণার কাজ শুরু হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, তার একক গবেষণায় এ পর্যন্ত মোট ১০২ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে শনাক্তকৃত প্রজাপতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ইন টাইগার’ ‘কমন ক্রো’, ‘প্লাম জুডি’, ‘ডিঙ্গি বুশব্রাউন’, ‘কমন ডাফার’, ‘এপফ্লাই’, ‘পি বু’, ‘টাইনি গ্রাস বু’, ‘ওক ব্লু ’, ‘কমন’, ‘সেইলর’, ‘কমন রোজ’, ‘ব্লু মরমন’, ‘স্ট্রাইপড অ্যালবাট্রস’, ‘মটিলড ইমিগ্রান্ট’, ‘কমন গ্রাস ইয়েলো’, ‘স্ট্রাইপড পাইরট’, ‘মানকি পাজল’, ‘ব্লু প্যানসি’, ‘পেইন্টেড লেডি’’।
ড. মনোয়ার বলেন, ‘‘এসবের মধ্যে ‘স্ট্রাইপড পাইরট’, ‘মানকি পাজল’, ‘ব্লু প্যানসি’ ও ‘পেইন্টেড লেডি’ নামের চার প্রজাতির প্রজাপতি ২০১১ শনাক্ত করা হয়েছে। ’’
পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির সন্ধান মিললেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে ১০২ প্রজাতির প্রজাপতি।
অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘প্রজাপতির নতুন নতুন প্রজাতির সন্ধান মিললেও দেশে প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। বনভূমি কমে যাওয়ায় প্রকৃতির এই অলঙ্কারটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ’’
তিনি প্রজাপতি সংরক্ষণে দাবি জানিয়ে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রজাপতির সবকটি প্রজাতির তালিকা তৈরির পাশাপাশি এদের সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১২
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর/আরআর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর