ঢাকা: তপ্তরোদে চিড়িয়াখানায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক ও হায়েনাসহ মাংসাশী প্রাণিকূল। রোদ্রের খরতাপে পাখিদেরও বেড়েছে অস্বস্তি, বিশেষ করে ম্যাকাউ, ইমু, ময়ূর, কেশোয়ারী, উটপাখি, হাড়গিলা, সাদা বক, চন্দনা, টিয়া, মদনটাক, গেটার ফ্লেমিং ও কালো গলার বকেরা অস্থির হয়ে পড়েছে চৈত্রের তাপদাহে।
নগরীর মিরপুরে ঢাকা চিড়িখানায় গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। চিড়িয়াখানায় ১১ প্রজাতির ৪১টি বৃহৎ মাংসাশী প্রাণী আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক ও হায়েনা। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মাংসাশী প্রাণীগুলো বেশ দুর্ভোগে পড়েছে।
সাধারণত ঢাকা চিড়িয়াখানাতে মাংসাশী প্রাণীগুলোকে খাদ্য হিসাবে দৈনিক গরুর মাংস ও মহিষের মাংস দেওয়া হয়। গরুর মাংস এমনিতেই গরম তার উপরে প্রাকৃতিক গরম মিলে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে প্রাণীরা। এর ফলে বাঘ, সিংহ,, ভাল্লুক ও হায়েনার পানিশূন্যতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, দুর্বলতাসহ প্রাণীদের নানাবিধ অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ সমস্যা দেখা দেয় বলে জানা গেছে।
চিড়িয়াখানায় প্রায় ৫৭ প্রজাতির ৯৯২ টি পাখি আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ম্যাকাউ, ইমু, ময়ূর, কেশোয়ারী, উটপাখি, হাড়গিলা, সাদা বক, চন্দনা, টিয়া, মদনটাক, কালো গলার বক ও গেটার ফ্লেমিং।
অতিরিক্ত গরমের কারণে এরা সব সময় অস্বস্তিতে থাকে। কারণ অন্যান্য প্রাণীদের মতো এদের ঘাম নির্গমন পথ বা শরীরে ঘাম অপসারণের কোনো প্রক্রিয়া থাকে না। ফলে অনেক সময় এদের হিট স্ট্রোক হতে পারে বলে জানা গেছে।
তবে বৃহৎ প্রাণীদের মধ্যে তৃণভোজী বিশেষ করে জিরাফ, জলহস্তি ও হাতি এদের কোনো সমস্যা হয় না গরমে। চিড়িয়াখানায় ২৩ প্রজাতির প্রায় ২১৭টি তৃণভোজী প্রাণি আছে।
হামাদ্রিয়াস বেবুন, সাদা হনুমান, কালো হনুমান, চিত্রা হরিণ, বানর, উল্লুক প্রভৃতি প্রাণিদের গরমে কোনো সমস্যা নেই বলে জানা গেছে।
কারণ এরা খাদ্য হিসাবে শাকসবজি, ফলমূল, ঘাস, লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে কিছু সরিসৃপ জাতীয় প্রাণির গরমের জন্য সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে অজগর ও গোখরা সাপেরা অতিরিক্ত গরমে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে। কারণ গরমকালে এরা শরীরের খোসাটা ছেড়ে দেয়। এছাড়া এসময়টা শীতনিদ্রা কাটানোর সময়। এসময় অজগর ও গোখরা জাতীয় সাপের খাবার গ্রহণের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। এরা সাধারণত ঠাণ্ডা গর্তে থাকতে ভালোবাসে। চিড়িয়াখানায় এদের খড় বা অন্যান্য উপাদান দিয়ে সেই ব্যবস্থা করা হয়।
গরমে এসব প্রাণির সমস্যা বিষয়ে কথা হয় ঢাকা চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাজমুল হুদার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “অতিরিক্ত গরমে মাংসাশী ও নানা প্রজাতির পাখির বেশি সমস্যা হয়। এই সমস্যা নিরসনের একমাত্র পথ পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা। সব সময় দেখভাল করা। নিয়মিতভাবে চিকিৎসা দেওয়া। আমরা নিয়মিতভাবে বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে খাবার স্যালাইন দিয়ে থাকি এদের। এছাড়া প্রতিদিন রুটিন ওয়ার্কের সময় পাখি ও মাংসাশী প্রাণীদের খোঁজ খবর আগেই নিয়ে থাকি। ”
অতিরিক্ত গরমে পশুপাখিদের যত্নের প্রতি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে বলে জানা গেছে। যে সকল প্রাণী, সরিসৃপ ও পাখিদের গরমে বেশি সমস্যা হয় সেসব বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সম্পর্কে কথা হয় ঢাকা চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর এবং বৃহৎ ও ক্ষুদ্র প্রাণীর সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মাকসুদুল হাসান হাওলাদারের সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “বিশেষ করে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাংসাশী প্রাণি ও পাখিদের বেশি সমস্যা হয়। সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করে আমরা সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করে থাকি।
এসব প্রাণি ও পাখিদের আমরা বাড়তি যত্ন নিয়ে থাকি। এছাড়া উন্নত মানের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৩
এমআইএস/ সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর