ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ধানক্ষেতের ধানটুনি

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
ধানক্ষেতের ধানটুনি

ধানক্ষেত কিংবা ঘাসবনে লুকোচুরি খেলতে ভালোবাসে যে পাখিটি তার নাম ধানটুনি। আকারে ছোট অত্যন্ত সুন্দর এই পাখিটিকে বলা চলে মাঠের পাখি।

আকারে যতই ছোট হোক না কেন, বুদ্ধিতে সে হার মানায় অনেক বড় পাখিদেরও।

ধানটুনির ইংরেজি নাম Zitting cisticola। বৈজ্ঞানিক নাম Cisticola Juncidis। আর বাংলা নামটা, মানে এই ধানটুনি নামটা রেখেছেন পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান। ধানটুনিকে আবার ঘাসটুনিও বলা হয়।
MAN-1
বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা মেলে ধানটুনির। আগেই বলেছি এরা খোলা মাঠের পাখি। মাঠ, ক্ষেত, ঘাস বা নলখাগড়াবনই এদের পছন্দের আবাস্থল ও বিচরণের এলাকা। তবে শহরেও ধানটুনি পাখি দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমারসহ আরও কিছু দেশে ধানটুনি পাখি পাওয়া যায়।

ধানটুনির শরীরের মাপ ৮-১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গায়ের রং লালচে বাদামি। হালকা হলুদ আভা রয়েছে তাতে। পেট মেটে রঙের, গলা ও বুক সাদা। মাথার তালু থেকে কালো টান ও ছোপ লেজের দিকে নেমে গেছে। লেজের প্রান্তে একটা সাদা টান আছে। লেজের উপরের অংশ ইট রং। ঠোঁট হালকা গোলাপি।

জিভ মূলত কালচে, অল্প একটু নীলচে ভাব আছে তাতে। চোখের উপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত ঘোলাটে সাদা টান। বছরে চারবার ধানটুনির গায়ের রং হালকা বদলে যায়। সবচেয়ে সুন্দর দেখায় বসন্তকালে।
MAN-1-4
ধানটুনি মূলত পোকামাকড় ও তাদের ডিম খায়। ঘাসবন, ধানক্ষেত- এসব জায়গার তলায় নামে খাদ্যের সন্ধানে। ঝোপঝাড় কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে খাবার সংগ্রহ করে না ধানটুনি।

ধানটুনি চৈত্র মাস থেকে বাসা বাঁধতে শুরু করে, চলে শরৎ পর্যন্ত।

ধানটুনির বাসা দেখতে সুন্দর। বাসার আকৃতি অনেকটা কলার মোচার মতো। ঢোকার পথ থাকে ওপরের দিকে। বাসা ১৩-১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বাসার জায়গা ঠিক করতে ১-৩ দিন নেয় ধানটুনি। ঘাস, মাকড়সার সাদা জাল ইত্যাদি দিয়ে বাসা তৈরি করে। বাসা বানাতে লাগে ৩-৬ দিন। পুরুষ এবং মেয়ে পাখি- উভয়েই বাসা বাঁধে।
MAN-1-22
ধানটুনি একসাথে ৪টা ডিম পাড়ে। তবে কখনো কখনো ৫-৬টা ডিমও পাড়ে। সাদাটে ডিমের উপর হালকা নীল আর বেগুনি রঙের আভা থাকে, থাকে গাঢ় বাদামি ও কালো নীল ছোপ। পুরুষ ও মেয়ে পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। ১২-১৪ দিনে বাচ্চা ফুটে। বাচ্চাগুলো উড়তে শেখে ১৩-১৫ দিনে। উড়তে শেখার আগেই অবশ্য চালাক-চতুর বাচ্চাগুলো বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে ঘাসে, ক্ষেতে ঘুরে বেড়ায়। একমাস বা তার একটু বেশি সময় মা-বাবার সাথে বসবাস করে ধানটুনির ছানারা। তারপর নিজেদের মতো থাকতে শুরু করে।

ছোট্ট সুন্দর পাখি ধানটুনি। স্বাচ্ছন্দ্যেই বাংলাদেশে বসবাস করছে এরা। কখনো ধানক্ষেত বা ঘাসের বন মাড়ানোর সময় কানে আসতেই পারে ধানটুনির ডাক- টিট টিট... টিট টিট...

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।