ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

রমনা পার্কে খুড়ুলেপ্যাঁচা

ফটো: খাইরুল আলম রাজীব, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট<br>সালাহ উদ্দিন জসিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৩
রমনা পার্কে খুড়ুলেপ্যাঁচা

ঢাকা: চোখ বড় বড় শান্ত পাখি খুড়ুলেপ্যাঁচা। নিশাচর ও শিকারি পাখি বলেও এদের চেনেন অনেকে।

গ্রাম বাংলায় এ পাখির সচরাচর বিচরণ থাকলেও ইট পাথরের ঢাকা শহরে এদের দেখা মেলা ভার।

বুধবার রাতের ঢাকায় এ পাখির সন্ধান পাওয়া গেলো রমনা পার্কে। অনেক শ্রমব্যয়ে তাকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বাংলানিউজের স্টাফ ফটোকরেসপন্ডেন্ট রাজিব।

খুড়ুলেপ্যাঁচার মুখমন্ডল চ্যাপ্টা। মাথার সম্মুখদিকে চোখ। চোখের চারিদিকে সাধারণত বৃত্তাকারে পালক সাজানো থাকে, যাকে বলা হয় ফেসিয়াল ডিস্ক। এদের অক্ষিগোলক সামনের দিকে অগ্রসর থাকায় এরা দ্বিনেত্র দৃষ্টির অধিকারী।

খুড়ুলেপ্যাঁচা এক প্রকার নিশাচর শিকারি পাখি। এই পাখির প্রায় ২০০টি প্রজাতি এখনও টিকে আছে। বেশিরভাগ প্যাঁচা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন, ইঁদুর ও কীটপতঙ্গ শিকার করে। তবে কিছু প্রজাতি মাছও ধরে। প্যাঁচা উপর থেকে ছোঁ মেরে শিকার ধরতে অভ্যস্ত। শিকার করা ও শিকার ধরে রাখতে এরা বাঁকানো ঠোঁট বা চঞ্চু এবং নখর ব্যবহার করে।

কুমেরন্ড, গ্রিনল্যান্ড এবং কিছু নিঃসঙ্গ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সব স্থানেই প্যাঁচা দেখা যায়। বাংলাদেশে ১৭টি প্রজাতির প্যাঁচা পাওয়া যায়। প্যাঁচা মূলত নিঃসঙ্গচর। এরা গাছের কোটর, পাহাড় বা পাথরের গর্ত ও পুরনো দালানে থাকে।

প্যাঁচার দূরবদ্ধদৃষ্টি আছে। ফলে এরা চোখের কয়েক ইঞ্চির মধ্যে অবস্থিত কোনো বস্তু পরিস্কারভাবে দেখতে পায় না। এরা এদের ধরা শিকারকে ঠোঁট ও নখরে অবস্থিত বিশেষ এক ধরনের পালক দ্বারা অনুভব করতে পারে। প্যাঁচা তার মাথাকে একদিকে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে ঘোরাতে পারে। তাই দু’দিক মিলে এদের দৃষ্টিসীমা ২৭০ ডিগ্রি। ফলে এরা নিজের কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে দেখতে পায়।

খুড়ুলেপ্যাঁচার শ্রবণশক্তি খুব প্রখর। শুধু শব্দ চালিত হয়ে এরা নিরেট অন্ধকারে শিকার ধরতে পারে। সামান্য মাথা ঘুরালে প্যাঁচা অনুচ্চ শব্দ যেমন, ইঁদুরের শস্যদানা চিবানোর আওয়াজও শুনতে পায়। প্যাঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক শব্দ শ্রবণে সহায়তা করে। অনেক প্রজাতির প্যাঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক অসমভাবে সাজানো থাকে, যাতে শিকারের অবস্থান নির্ণয় করা সহজ হয়।

এখনও পর্যন্ত যেসব প্যাঁচার দেখা পাওয়া যায় তাদের দুটো গোত্রে ভাগ করা হয়েছে: সাধারণ প্যাঁচা বা স্ট্রিগিডি এবং লক্ষ্মীপ্যাঁচা বা টাইটোনিডি।

ভিন্ন প্রজাতির প্যাঁচার ডাক ভিন্ন রকম। ডাকের ভিন্নতা অনুযায়ী বাংলায় বিভিন্ন প্যাঁচার বিভিন্ন নামকরণ হয়েছে। যেমন: হুতুমপ্যাঁচা, ভূতুমপ্যাঁচা, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, খুড়ুলে প্যাঁচা, কুপোখ, নিমপোখ ইত্যাদি।

প্যাঁচার অদ্ভুত রকমের ডাক এবং নিশাচর স্বভাব একে নানা কুসংস্কার ও অলৌকিক চিন্তার সাথে যুক্ত করেছে। কেনিয়ার কিকুয়ু উপজাতিগোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে, প্যাঁচা মৃত্যুর আগমনের কথা জানিয়ে দেয়। যদি কেউ একটি প্যাঁচা দেখে কিংবা তার আওয়াজ শোনে তাহলে সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। প্রচলিত বিশ্বাসবোধে প্যাঁচাকে মন্দ ভাগ্য, শারীরিক অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এ বিশ্বাস এখনো প্রচলিত রয়েছে।

তবে খুড়ুলেপ্যাঁচা বা প্যাঁচা নিয়ে প্রচলিত যত কুসংস্কারই থাকুক, আসলে এরা নিরীহ প্রকৃতির উপকারী পাখি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।