ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রকৃতি সংরক্ষণ একজীবনে সম্ভব নয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৩
প্রকৃতি সংরক্ষণ একজীবনে সম্ভব নয়

গাছপালা, ফুল, পাখি- সোজা কথায় প্রকৃতি নিয়ে লেখেন- বাংলাদেশে এমন লেখকের সংখ্যা নেহায়েতই হাতে গোনা। সেই হাতে গোনা লেখকদের একজন মোকারম হোসেন।

শিশু একাডেমির এই কর্মকর্তা ‘তরুপল্লব‘ নামের প্রকৃতি বিষয়ক একটি সংগঠন নিয়েও কাজ করছেন।   বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজের নিউজরুম এডিটর মীম নোশিন নাওয়াল খান।

বাংলানিউজ: আপনি নিয়মিত লিখছেন। লেখালেখির শুরু কবে, কীভাবে?

মোকারম হোসেন: আসলে গাছপালা নিয়ে আমি অনেক পরে লেখা শুরু করেছি। তবে ছোটবেলা থেকেই আমি লিখতাম। স্কুলে দেয়ালপত্রিকাও করেছি। স্কুলের সীমানা পেরিয়ে বন্ধুরা মিলে ‘প্রয়াস’ নামে একটি ম্যাগাজিনও বের করেছিলাম। একটা স্থানীয় পত্রিকায় কিছুদিন রিপোর্টিং করেছি।

বাংলানিউজ: আপনি কাজ করছেন গাছপালা- প্রকৃতি নিয়ে। এই প্রকৃতি নিয়ে লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?

মোকারম হোসেন: আমি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে যোগদান করার পর খুব কাছ থেকে পেয়েছি বিপ্রদাশ বড়ুয়া, দ্বিজেন শর্মার মতো মানুষদের। তারপর থেকে প্রকৃতি নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। আর শিশু একাডেমিতে একটি সমৃদ্ধ বাগান রয়েছে- এটিও আমাকে প্রকৃতি নিয়ে লিখতে আগ্রহী করে তুলেছে।
বাংলানিউজ: এখন যে প্রকৃতি নিয়ে কাজ করছেন, নিজের এই লেখালেখির ব্যাপারে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

মোকারম হোসেন: ভবিষ্যত পরিকল্পনা তো অনেক। সত্যি বলতে প্রকৃতি সংরক্ষণের যে ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করতে চাই, সেটা আমার কেন, অনেকেরই এক জীবনে সম্ভব নয়। তবে মানুষের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম জাগিয়ে তোলার চেষ্টাটা অব্যাহত রাখব। এবছর আমার দু’টি গুরুত্বপুর্ণ বই বেরিয়েছে, যার একটি হচ্ছে ‘বাংলার শত ফুল। ’ বাংলাদেশের একশ ফুলের ছবিসহ বর্ণনা রয়েছে এই বইয়ে। প্রতি বছরই বাংলার শত ফুলের একটি করে ভলিউম বের হবে। এভাবেই প্রকৃতি সম্পর্কে পাঠককে জানানোর ইচ্ছে আছে।

বাংলানিউজ: এবার আসি তরুপল্লবের কথায়। ‘তরুপল্লব’ এর যাত্রা শুরু কবে? এমন একটি সংগঠন করার আগ্রহ হয়েছিল কী ভেবে?

মোকারম হোসেন: তরুপল্লবের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। এটা করতে আগ্রহী হয়েছিলাম কারণ শুধু লেখার মাধ্যমে আমরা অনেককিছুই করতে পারি না। একটা গাছ বিষয়ে আমি লিখতে পারি, কিন্তু সেটা পড়ে একজন পাঠক যতটুকু বুঝবেন, সামনাসামনি দেখলে তার চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।

তাই বলা যায় যে লেখালেখির মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃতির একদম কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন আমরা ভাবতে শুরু করি যে এমন কোনো সংগঠন করা যায় কীনা যার মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে গিয়ে গাছ চেনানো, দেখানো, গাছের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করা যাবে। সেসব কথা ভেবেই তরুপল্লবের জন্ম।  

বাংলানিউজ: তরুপল্লব নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

মোকারম হোসেন: তরুপল্লব নিয়মিত গাছ চেনার আয়োজন করছে। আমাদের এই গাছ পরিচিতির আয়োজন আরও বিশাল পরিসরে করার ইচ্ছে আছে। এছাড়া ইচ্ছে আছে উপকূলীয় এলাকায় গাছের বেষ্টনী সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করার ব্যাপারে কাজ করার।

বাংলানিউজ: আপনি দেশের বাইরেও গেছেন, সেখানকার পরিবেশ দেখেছেন। ইউরোপ-আমেরিকা বা বাইরের অন্য দেশগুলোতে যে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতনতা বা উদ্যোগ- সে তুলনায় বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়ে আছে বা পিছিয়ে আছে বলে আপনি মনে করেন?

মোকারম হোসেন: আসলে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে পাশ্চাত্য যতটাই এগিয়ে আছে আমরা ততটাই পিছিয়ে আছি। তবে কত কয়েক বছরে পরিবেশের ব্যাপারে মানুষ সচেতন হয়েছে। এখন কোথাও পাখি শিকার হলে সেটা নিয়ে হৈচৈ হয়, মানববন্ধন হয়। একইভাবে গাছ কাটা হলেও প্রতিবাদ করা হয়। এই ব্যাপারগুলো ইতিবাচক। তবে এখনো আমরা অনেক বেশি সচেতন হতে পারি নি। আমেরিকায় একটা গাছ কাটতে হলে সিটি করপোরেশনের অনুমতি লাগে, ফি জমা দিতে হয়- সুতরাং একটি গাছ কাটা খুব সহজ কাজ নয়। ফলে সেখানে গাছ কাটার হার খুবই কম। কিন্তু বাংলাদেশে যে কেউ চাইলেই একটা গাছ কেটে ফেলতে পারে।

বাংলানিউজ: নতুন প্রজন্মের প্রতি কী বলবেন প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে?

মোকারম হোসেন: সবার উদ্দেশ্যেই যেটা বলার আছে সেটা হলো, আসলে পৃথিবীর প্রতিটা জিনিসের সাথেই প্রকৃতির সম্পর্ক আছে। গাছপালা অক্সিজেন ছাড়ছে, সেই অক্সিজেন নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। ফলমূল, আটা-ময়দা- যাই বলি- সবই গাছপালা থেকে পাচ্ছি। সুতরাং, সব দিক থেকেই আমরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। কাজেই এই প্রকৃতিকে ধ্বংস করে আমরা কখনো বেঁচে থাকতে পারব না। তাই নিজেদের কথা ভেবেই আমরা যেন প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হই।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।