ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আন্তর্জাতিক বন দিবস

বন মানেই কাঠের বাগান নয়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
বন মানেই কাঠের বাগান নয়

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): ক্রমাগত দখল আর উজার হতে হতে চিরসবুজ বন প্রাকৃতিক পরিমণ্ডল হারাচ্ছে। ফলে বিলুপ্ত এবং বিপন্ন হয়ে পড়ছে বনকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা নানা ধরনের প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।

আমাদের বনগুলো নিজস্ব প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ক্রমেই টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।  
 
সোমবার (২১ মার্চ) আন্তর্জাতিক বন দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘করলে রক্ষা সবুজ বন, থাকবে প্রাণী, বাঁচবে জীবন। ’
 
বন দিবস উপলক্ষ্যে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে দু’জন বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- আমাদের বনগুলো এখন কেমন আছে? 
 
তাঁরা দু’জনেই বলেছেন, নানাবিধ কারণে বনের আপন প্রাকৃতিক পরিমণ্ডল হারানোর কথা। আক্ষেপের সাথে বলেছেন- বন মানেই কিছু কাঠের বাগান নয়। বন এবং বনের প্রাণিসম্পদকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছি না বলেই বনগুলো দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. ইসতিয়াক সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের বনগুলো এখন সুস্থ নেই। ’৯০ এর দশকের শুরুতে কাজের সুবাদে বৃহত্তর সিলেটের সব বনের ভেতরে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তখন লাউয়াছড়া, রেমাকালেঙ্গা, মাধবকুন্ড বা অন্যান্য বনের যে ‘ইন্টিডিটি’ ছিল এটা তো এখন আর কিছুই নেই। এখন ট্যুরিজম প্রবেশ করেছে। সবদিক থেকে আমাদের বনের জায়গাগুলোকে কিন্তু আমরা রক্ষা করতে পারিনি। একেবারে নষ্টই করে ফেলেছি আমরা। ’
 
‘আরো পরিষ্কার করে বলা যায়– গাছপালার ক্ষতি তো করেছিই; তার পাশাপাশি বন্যপ্রাণিদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা আমরা রাখতেই পারিনি। আমাদের বনগুলো পৃথিবীর অন্যান্য বনের তুলনায় ছোট। ফলে একটা ছোট বনে এতো লোক যদি চারদিক থেকে প্রবেশ করে তবে বনগুলোর ক্ষতি হতে বাধ্য। ’
 
তিনি উদাহারণ টেনে বলেন, ‘ধরুন, সুন্দরবনের কথাই। আমরা প্রায়ই শুনে থাকি লক্ষাধিক লোক প্রতিদিন সুন্দরবনের ভেতরে যায়। কেউ চিংড়ি মাছ ধরতে যায়, কেউ কাঁকড়া ধরতে যায়, কেউ মধু সংগ্রহ করতে যায়, কেউ কাঠ আহরণ করতে যায়। এতো লোক বনে গেলে তো একটা ডিসটার্বেন্স তৈরি হয়। এটা প্রাণিকূলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ’     
 
ঢাকার আশেপাশের যে বন অর্থাৎ ভাওয়াল, মধুপুর প্রভৃতি প্রাকৃতিক বনগুলো ব্যাপক দখলের ফলে তার প্রাকৃতিক অবস্থা হারিয়েছে। শুধু সাধারণ জনগণই কিন্তু এগুলো দখল করেনি। দখল করেছে সরকারের বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠানগুলো। বন বিভাগের থেকে সরকারের ওই বিভাগগুলো খুবই প্রভাবশালী। সুতরাং সরকার নিজেও কিন্তু এই বনগুলো ধ্বংসের দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন এ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী।
 
অনেকটা কৌতুকের ছলে তিনি বলেন, ‘এখন বনগুলো এমন একটি অবস্থানে গিয়ে ঠেকেছে যে, বন থেকে আর গাছ কাটার সুযোগই নেই। কিছুটা হলেও গাছচুরি এখন বন্ধ হয়েছে। এই কারণে বন্ধ হয়েছে যে- বনে তো আর গাছই নেই! কাটবে কী, বলুন?

বন বিভাগে কৃত্রিম বনায়ন প্রসঙ্গ ইসতিয়াক বলেন, যদিও বনবিভাগ দাবি করে থাকে যে তারা স্যোশাল ফরেস্ট্রি করে বনভূমি বাড়াচ্ছে। বনের নিজস্ব জায়গা জনগণ দখল করে নিচ্ছে এটা আমরা ঠেকাতে পারিনি, এখন তাদের দিয়ে তারা বনায়ন করছে। কিন্তু এটা ফরেস্ট্রি হচ্ছে না। শুধু গাছ লাগনোই হচ্ছে।
 
‘কিছু চাম্বল, কিছু মেহগনি, কিছু একাশিয়া লাগিয়ে; সেগুলো আবার দশ-পনের বছর পরে কেটে ফেলা এসব কিন্তু প্রাকৃতিক বনের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। যে প্রাকৃতিক বন পশুপাখিকে সহায়তা করে, পশুপাখির আবাস হিসেবে থাকে বা একটা ইকো-সিস্টেম ডেভেলপ করে সেটা কিন্তু আর হচ্ছে না। ওই জিনিস কিন্তু আর তৈরি করতে পারছি না আমরা। ’
 
‘যে কৃত্রিম বাগান তৈরি করে আমরা দশ-পনের বছর পরে কেটে ফেলছি সেগুলো থেকে আর যাই হোক - একটা নেচার কে সাপোর্ট করার মতো হেলথ আর তার অবশিষ্ট থাকে না। এটাই হলো বনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বন মানেই কিন্তু শুধু কিছু কাঠের বাগান নয়। বন মানেই আরো অনেক কিছু। ’ -বলেন এই উদ্ভিদ গবেষক।

এদিকে স্বনামধন্য সরীসৃপ গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন ধ্বংসের অন্যতম কারণ আমাদের দেশের জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ। দেশে বনভূমিগুলো কম থাকার ফলে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে বনভূমিকে দখল করছে। এছাড়াও আমাদের সরকারেরও রয়েছে উদাসীনতা। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বনের সত্যিকারের উপকার কিছুই হচ্ছে না।  
 
তিনি আরও বলেন, ‘বন বা প্রকৃতির সাথে যে মানুষের এক ধরনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে - এটা মানুষ আসলে বোঝে না। ধরুন, আমার যতই টাকা-পয়সা থাকুক না কেন! আমার যদি মানসিক শান্তি না থাকে তবে এসব টাকা-পয়সার কোনো মূল্য নেই। বন বা প্রকৃতি মানুষকে সেই মানসিক শান্তি, স্বস্তি দিয়ে থাকে। যা বন ছাড়া আপনি অন্য কোথাও পাবেন না। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
বিবিবি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।