ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বনকালিমের প্রতি ভালোবাসা 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
বনকালিমের প্রতি ভালোবাসা  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রজাপতিরা অবলীলায় মানুষের ভালোবাসা পায় তাদের চোখ জুড়ানো মায়াবি সৌন্দর্যের কারণে। নানান রং আর আকারে পূর্ণতা পেয়ে প্রজাপতিরা প্রাকৃতিক সুস্থতার প্রতীক হয়ে উড়ে বেড়ায় এদিক-ওদিক।


 
সেদিন বাসায় একটি বড় আকারের প্রজাপতি দেখে প্রথমে হতভম্ভ এবং পরে ভীষণ আনন্দিত হলাম। সত্যি বলতে কি, এতো বড় আকারের প্রজাপতি এর আগে কখনো চোখে পড়েনি।  

গবেষকের কাছ থেকে জানা গেলো ওর নাম ‘বনকালিম’। আমার দৃষ্টিতে মায়াবি সৌন্দর্য ঢেলে প্রজাপতিটা মোহাচ্ছন্ন করলো এক মুহূর্তে। তার প্রেমে নিমেষেই বাঁধা পড়লাম আমি। কালো রঙের সঙ্গে হালকা সাদা রঙের নকশা সহজেই আকর্ষণ করে।  
 
১১ এপ্রিলের দুপুরটা তখন তীব্র রোদে মাখামাখি। দাঁড়ানো যাচ্ছে না কোনোক্রমেই। সে যে ডাল-পাতার উপর বসে আছে আমি সেখানে পৌঁছা মাত্রই উড়ে যায়! এখন ঘটলো দু’তিন বার। তবে হাল ছাড়া যাবে না কিছুতেই। কালো বড় আকারের বিরল প্রজাপতিটার ছবি তোলাটাই ছিল সেদিনের বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে প্রায় ত্রিশ মিনিট গড়িয়ে গেলো।

মায়ের হাতে লাগানো মাধবিলতার গাছটিকেই সে কিছুক্ষণের বিশ্রামের স্থান হিসেবে বেছে নিলো। চুপিচুপি অগ্রসর হলাম তার দিকে। রুম থেকে চেয়ার নিয়ে এলাম। দেখলাম না, সে আর অন্যত্র যাচ্ছে না। চুপ করে বসে আসে মাধবিলতার উপর। হতাশা মুছে হাসি ফুটতে শুরু করেছে মুখে।  
 
ছবি তুলতে তুলতে একদম কাছে চলে গেলাম। কিন্তু এ কী! সেই এখন আর উড়ছে না। পালিছে যাচ্ছে না অন্য কোনো গাছে। হয়তো সে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নয়তো উপলব্ধি করেছে মানবপ্রেমিকের ‘প্রেম’টা একটু উপভোগ করার।   

ডানা দু’টি কালো-সাদা রঙে ডোরাকাটা। ডানা অগ্রভাগে লাল রঙের ত্রিকোণাকৃতি ছাপ। প্রজাপতিটির শরীরে কালো, সাদা, লাল ও হালকা কমলা রঙের অপূর্ব সংমিশ্রণ রয়েছে।

প্রজাপতি গবেষক, আলোকচিত্রী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রজাপতির নাম বনকালিম। ইংরেজি নাম Great Mormon এবং বৈজ্ঞানিক নাম Papilio memnon। এটি স্ত্রী প্রজাতির প্রজাপতি। এরা লেবু বাগান এলাকা বা এর আসে পাশে বেশি থাকে। লেবুগাছে ডিম পাড়ে। পাহাড়ি এলাকায় এদের পাওয়া যায়।  
তিনি আরও জানান, মেয়েরা পুচ্ছহীন বা পুচ্ছযুক্ত হতে পারে। মেয়েদের মধ্যে বহুরূপতা দেখা যায় পায় ৯ ধরনের। এদের পাখার উপরের বর্ণ নীলাভ সবুজ বর্ণের মধ্যে ডাস্টেড কালো রং। বাংলাদেশে Papilio জেনাসের মোট ৮টি প্রজাতি তালিকাভুক্ত রয়েছে। পেছনের পাখনার শেষের দিকে লাল রঙের দাগ।  
 
ভালোবাসায় পাগল করে সে মুছে গেছে পৃথিবীর বর্তমান অবস্থান থেকে! বেঁচে নেই আর ভালোবাসার সেই প্রজাপতিটা! কারণ, উড়ন্ত প্রজাপতিদের আয়ু সপ্তাহকাল! বা এর সামান্য বেশি!     
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।