ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘নন্দিনী’র নন্দন...

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
‘নন্দিনী’র নন্দন... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নন্দিনী! রবি ঠাকুরের রক্তকরবীর নন্দনী নয়। এটি গোলাপ সদৃশ্য একটি বিদেশি ফুল।

দীর্ঘ ১৭ বছর গবেষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশের ফুল প্রেমীরা হাতে পাচ্ছেন ‘নন্দিনী’।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ফুলটি প্রায় ১৫ দিন তাজা থাকে। তাই বাজারে ফুলপ্রেমীদের কাছে এর কদর বাড়ছে। কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে এ ফুলের অবস্থান বিশ্বে দশম।

চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে এ ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। বর্ণ বৈচিত্র্যের কারণে এ ফুলটি আর্ন্তজাতিক ফুল বাজারে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছর ‘নন্দিনী’ চাষের জন্য যশোরের গদখালী ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কৃষকদের মাঝে ইউএসএইড ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় দশ হাজার চারা বিতরণ করা হয়। কৃষকদের দেওয়া হয় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও।

শেকৃবি অধ্যাপক এ এ জামাল উদ্দিন ও তার স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ কাজটি করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে আগারগাঁও ফুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ফুল বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা দরে। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফুলটি দেশে উৎপাদন শুরু হলে প্রতিটির দাম পড়বে ১০ টাকার মতো।

‘নন্দিনী’ গবেষক জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর উৎপাদিত ফুল রফতানি উপযোগী হয়নি। আমরা গবেষণাগারে ও মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছি। বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী জাত উদ্ভাবনে চেষ্টা চলছে।  

‘বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আট রঙের নন্দিনী ফোটানো সম্ভব হয়েছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি নন্দিনী ফুল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফুলদানির পানিতে অন্তত ১৫ দিন সতেজ থাকতে পারে। কিন্তু পানিতে যদি সুক্রোজ মিশিয়ে দেওয়া যায় তবে তাজা থাকবে অনন্ত ২৫ দিন। অন্যদিকে এ ফুলের কলি সতেজ থাকে ১ মাস। ’

‘একটি গাছ থেকে সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা পাইকারি মূল্যের ফুল বিক্রি সম্ভব। ’

গবেষক জামাল বলেন, বেশ কিছু দেশে এ ফুল চাষ করা হলেও সেসব দেশে নন্দিনীর চারা আমদানি করা হয় জাপানের সাকাতা বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে।

‘কিন্তু আমরা গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে পেরেছি। বাণিজ্যিকভাবে এটি অন্যান্য ফসল থেকে লাভবান হবে। ’

ড. জামাল জানান, ‘ঝড়, বৃষ্টি, প্রচণ্ড গরম বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নন্দিনীর গাছটি অক্ষত থাকে। প্রতিটি ফুল শক্ত ডাঁটা বা বৃন্তের ওপর থাকে বলে কখনো বেঁকে যায় না বা নুয়ে পড়ে না। ’

জানা যায়, ‘নন্দিনী’ ফুলটির আদি বাস যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বত এলাকায়। জাপান, মেক্সিকো, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলেও এ ফুল জন্মায়। এর ইংরেজি নাম লিসিএনথাস। বৈজ্ঞানিক নাম Eustoma grandiflorum|
গবেষক ড. জামাল উদ্দিন এ ফুলের বাংলা নাম দিয়েছেন ‘নন্দিনী’। এটি Gentianaceae গোত্রের একটি উদ্ভিদ। ১২ মাসই  উৎপাদন যোগ্য এ ফুল গাছটি লবণ ও খরা সহনশীল।

তাই খরা ও লবণাক্ত প্রবণ এলাকার ফুল চাষিদের জন্যও ‘নন্দিনী’ সম্ভবনার এক নব দিগন্ত উন্মোচিত করবে- এমনটাই সংশ্লিষ্ট গবেষকদের প্রত্যাশা।

**কৃষক পর্যায়ে অবমুক্ত ‘নন্দিনী’

বাংলোদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।