ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দুর্লভ নীল শিলাদামা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৬
দুর্লভ নীল শিলাদামা ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): বছর দু’এক আগে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পাখিটিকে প্রথম দেখা। পাকারাস্তা সংলগ্ন ঘন বাঁশঝাড়ের একপাশে বসেছিল পাখিটি।

পোকা জাতীয় কিছু একটা ধরার জন্য বেশ ব্যতিব্যস্ত।

পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে যাচ্ছে একের পর এক গাড়ি। কিন্তু পাখিটি নির্বিকার। গাড়ির ইঞ্জিনের তীব্র শব্দও তার মনোযোগে ব্যঘাত ঘটাতে পারছে না। প্রকৃতির নির্জনতা ভঙ্গকারী যান্ত্রিক যানের শব্দ আর কতটুকুই তার ক্ষতি করতে পারে, হয়তো এই ভেবে!

সারাবছর এ পাখির দেখা মেলে না। মাঝে-মধ্যে শীত মৌসুমে হঠাৎ চোখে পড়ে। পরিযায়ী এই পাখিটির নাম ‘নীল শিলাদামা’। ইংরেজি নাম Blue Rock Thrush এবং বৈজ্ঞানিক নাম Monticola solitarius। দৈর্ঘ্যে পাখিটি প্রায় ২৩ সেমি ও ওজনে মাত্র ৫০ গ্রাম।

পুরুষ এবং স্ত্রী পাখিটির শারীরিক রঙ ভিন্ন। পুরুষ নীল শিলাদামার দেহ নীল রঙের, তবে গাঢ় নীল নয়। হালকা নীল এবং তাতে অস্পষ্ট আঁশের দাগ। আর স্ত্রী নীল শিলাদামার দেহে রয়েছে স্পষ্ট বাদামি আঁশের দাগ। তবে প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী প্রজাতিদের আকর্ষণ করার জন্য পুরুষ পাখির দেহ গাঢ় নীল হয়ে ওঠে। সে সময়টাতে দূরত্ব ঘুচে ভালোবাসায় এক হয়ে যায় ওরা।    বন্যপ্রাণি গবেষক ও লেখক আ ন ম আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে একটি গাছে উপর থেকে পাখিটির ছবিগুলো তুলেছিলাম। এর আগে কাপ্তাই ও সিলেটে নীল শিলাদামাকে দেখিছিলাম; কিন্তু সে সময় ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।  

তিনি পাখিটির নাম প্রসঙ্গে বলেন, গ্রামাঞ্চলে এ পাখিটিকে ‘নীল দোয়েল’ নামে ডাকা হয়। অবশ্য এ নামে সে বেশি পরিচিত নয়। নীল শিলাদামা বা নীল থ্রাস নামেই বেশি পরিচিত। পাখিটি ছোট আকারের পতঙ্গভুক পাখি। ডানার তুলনায় তার লেজটি খাটো। পা কিছুটা লম্বা।

এর অবস্থান সম্পর্কে আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, শীতকালেও যে এদের বেশি দেখা যায় তা কিন্তু নয়। খুব কমই চোখে পড়ে। এরা সচরাচর পাথরের ঢাল, পাথুরে নদীতট, পাথরের খাদ, উন্মুক্ত বন, পতিত জমি ও লোকালয়ে বিচরণ করে। প্রজননকাল ছাড়া অন্য সময় একাকি দেখা যায়।

বাঁশের খুঁটি, মরা তাল-নারকেল গাছের মাথায়, পুরনো মঠ, মন্দির ও মসজিদের ছাদ বা চূড়া প্রভৃতিতে বসে থেকে শিকার খোঁজে এ পাখি। বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ, ছোট ব্যাঙ, টিকটিকি ইত্যাদি শিকার করে খায়। বন-জঙ্গলের পাকা ও রসাল ফল খেতেও পছন্দ করে বলে জানান তিনি।

নীল শিলাদামার প্রজনন সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এপ্রিল থেকে জুলাই এদের প্রজননকাল। এ সময় এদের মূল আবাসভূমিতে খাড়া পর্বত, শিলা, দেয়ালের ফাটল বা গাছের গর্তে ঘাস, গাছের শিকড় ও চুল দিয়ে বাটির মতো বাসা বানায়। নীল রঙের ৩ থেকে ৫টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী পাখিটি একাই প্রায় ১৫ দিন তা দিয়ে ছানা ফোটায়। তবে ছানাগুলো যত্নআত্তি এবং খাবার সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৬
বিবিবি/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।