ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আঙ্গুলে যখন প্রজাপতির মায়াবী পরশ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬
আঙ্গুলে যখন প্রজাপতির মায়াবী পরশ ছবি:বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রজাপতির স্পর্শে জেগে ওঠার গল্পটা সেদিন বলা হয়েছিলো। তবে সেদিনের সেই প্রতিবেদনে একটি প্রজাপতির কথা লেখা হয়! সময় যখন আরও গড়ালো, ক্রমশই বাড়তে থাকলো অনেক উড়ন্ত ডানার প্রজাপতির ভিড়।

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার-একটি নয়, সেদিন দু’টি প্রজাপতি আমাকে স্পর্শ করেছিলো!

প্রথমদিকে ‘আয়ানদাঁড়ি’ নামে যে প্রজাপতিটা আমার শরীরে প্রিয়ার শিহরণ জাগায়, তাকে নিয়ে প্রথমেই লেখার গোপন ইচ্ছেটা দানা বাঁধে মনে।    

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সেদিন গিয়ে প্রজাপতিদের সঙ্গে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা প্রিয়জনের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর মতো সুগভীর সৌন্দর্য্য নিয়ে যুক্ত হলো। আশ্চর্য এক ভালোবাসায় পূর্ণ হলাম। প্রকৃতির এমন বিশুদ্ধ তুলতুলে বন্ধুদের পেয়ে, দু’টি প্রজাপতির অনাকাঙ্ক্ষিত পরশ!

প্রজাপতির এমন অপূর্ব পরশের মাখামাখি হতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন লাউয়াছড়ায়। তবে ব্যস্ততাকে সঙ্গে নিয়ে এলে প্রকৃতির সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম প্রাকৃতিক নানা অনুভূতি কখনই মনকে স্পর্শ করবে না।

দু’টো প্রজাপতি সেদিন আমার আঙ্গুল স্পর্শ করে সঞ্জীবনী সুধা অর্থাৎ ভেতর থেকে জেগে ওঠার তীব্র আহ্বান শিরা-উপশিরায় পৌঁছে দিয়েছিলো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আয়ানদাঁড়ি প্রজাপতি’ লাইসিনিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Anthene emolus। এদের ডানার বিস্তার ২৮-৩০ মিলিমিটার। ধূসর রঙের এ প্রজাপতিটির ডানায় বাহিরের দিকের রঙ মেটে ধূসর।

যার অনেকগুলো সাদা রঙয়ের দাগ সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। ডানার ভেতরের দিকের রঙ ফ্যাকাসে বেগুনী নীল, স্ত্রী প্রজাপতির ক্ষেত্রে খয়েরি।

প্রজাপতিটির বিস্তৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চলে এর দেখা না মিলেও উত্তর ও দক্ষিণ‍াঞ্চলের কিছু জেলায়, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব প্রায় সবকটি জেলায় এদের দেখা মেলে।

এরা চিরসবুজ বনের নিচের দিকের ঝোপঝাড় পছন্দ করে। জঙ্গলের ছরার পাশের ছোট ছোট ঝোপঝাড় এবং কম উচ্চতাবিশিষ্ট গাছপালার ওপর দিয়েও এদের উড়ে বেড়াতে দেখা যায়।

‘স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় এরা একক বা অনেকে একসঙ্গে মাটি থেকে পানি ও মিনারেল সংগ্রহ করে। স্ত্রী প্রজাপতিটি সাধারণত অশোক গাছে ডিম পারে। আসাম লতা, অশোক, ছাতিম, লজ্জাবতি, জংলী ঘাগ্রা, ত্রিধারা মধু সংগ্রহের জন্য এদের পছন্দের ফুল গাছ। ’

আর সাদা-কালোর রঙের  প্রজাপতি ‘তিলাইয়া’ সম্পর্কে অমিত কুমার নিয়োগী বলেন, এটি লাইসিনিডি পরিবারভুক্ত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Castalius rosimon। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে একই রকম হয়। এদের চোখ দু’টো কাল রঙয়ের, দেহ সাদা।

ডানার বাইরের দিকটা সাদা ও তাতে বিভিন্ন আকারের কাল রঙের দাগ সুন্দরভাবে বিস্তৃত থাকে। পেছনের ডানার মাঝামাঝি অংশটিতে দাগ থাকে না। এদের লেজ কালো রঙয়ের তবে অগ্রভাগ সাদা।

এর বিস্তৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সর্বত্র এদের দেখা মেলে। বিশেষ করে বরই গাছের আশেপাশে। কারণ স্ত্রী প্রজাপতিটি বরই গাছের কচি পাতায় ডিম পারে। সব ধরনের বুনো লতাপাতার ফুল থেকেই একে মধু খেতে দেখা যায়। ‍

তবে ত্রিধারা, দরফা, হায়ব্রিড ডালিয়া, বোতাম ফুল, আসাম লতা, লজ্জাবতি, জংলী ঘাগ্রা ইত্যাদি ফুলে বেশি দেখা যায়।

**প্রজাপতি ছুঁয়ে দিলেই ‘শুদ্ধ’ হয়ে যাই

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬
এএটি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।