এর আগে দু’দফায় আর ৪৩টি কুমির ছানা হত্যা ও নিখোঁজ হয়। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) আরও ১৭টি মিলিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ৬০টি কুমির ছানা হত্যা ও গায়েব হয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সকালে করমজল কেন্দ্রে কুমিরের বাচ্চার প্যানে কয়েকটি বাচ্চা মারা গেছে। পরে সেখান থেকে কুমিরের ১৪টি মৃত বাচ্চা ও দু’টি বাচ্চার লেজ উদ্ধার করা হয়। মৃত কুমিরের বাচ্চাগুলোর ঘাড়ের ওপর কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। যা থেকে মনে হচ্ছে কোনও বন্যপ্রাণী এগুলোকে হত্যা করেছে।
এছাড়া আরও একটি কুমিরের বাচ্চা কোনও বন্যপ্রাণী সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলেছে বলে জানান তিনি।
সাইদুল ইসলাম জানান, মনে হচ্ছে বনবিড়াল বা এ ধরনের কোনও বন্যপ্রাণী একটি বাচ্চাকে সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলেছে। এর আগে ২৯ জানুয়ারি করমজল কেন্দ্রের দু’টি প্যান থেকে ৩৬টি কুমিরের বাচ্চা খোয়া যায়। পর দিন ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হয় প্যানে থাকা কুমিরের আরও সাতটি বাচ্চা। যেগুলোর মধ্যে ছয়টি বাচ্চার মরদেহ এবং একটি লেজ ও একটি মাথা পাওয়া যায়। তবে এর আগে নিখোঁজ ৩৬টি কুমির ছানার আর কোনও হদিস পাওয়া যায়নি।
প্রথমে দুই দফায় কুমির ছানাগুলো নিখোঁজের পর শিয়াল বা বনবিড়াল এগুলোকে নিয়ে গেছে প্রচার করলেও বন বিভাগ পরে দাবি করে, দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে বাচ্চাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় বন বিভাগ কেন্দ্রের বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। চাকরিচ্যুত করা হয় চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী জাকির হোসেনকে। জাকিরসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি ও হত্যার অভিযোগে খুলনার দাকোপ থানায় একটি মামলা দায়ের করে বন বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়েছে।
তিনি জানান, রোববার আরও তিনটি কুমিরের বাচ্চা খেয়ে ফেলাসহ ১৭টি বাচ্চা মৃত্যুর পর কমিটি আরও এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটিকে আরও এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
মৃত কুমির বাচ্চাগুলোর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে ২০০২ সালে করমজলে দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২৭৭টি কুমির থাকলেও তিন দফায় ৬০টি কুমির হত্যা ও নিখোঁজের পর তিনটি বড় কুমিরসহ মোট ২১৭টি কুমির রয়েছে।
এদিকে, করমজলে দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে একের পর এক কুমির নিখোঁজ ও হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পাচারের কোনও ঘটনাকে আড়াল করতে নতুন করে আবার কুমিরের বাচ্চা হত্যা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এমইউএম/আরবি