বরং দিনের পর দিন দায়িত্ব ও মমতার সঙ্গে পরের ডিমগুলোকে তা দিয়ে ছানা ফুটিয়ে থাকে।
ছোটপাখি মৌটুসির বাসায় বড় আকারের পাখি সুরেলা কোকিলের ডিম পেড়ে চলে যাওয়া একটি তাক লাগানো আশ্চর্য ঘটনা! বাংলাদেশের ছোট পাখিদের দলের একটি প্রজাতি হলো মৌটুসি (Sunbird)।
প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, এর ফলেই উপলব্ধি করা যায়, এই ছোট মৌটুসি পাখিটার টিকে থাকার ক্ষমতা এতোই বেশি যে, বাচ্চা তোলার পরই সে কিন্তু বিলুপ্ত হয়নি। অন্যের বাচ্চা তুললে তো তার নিজের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। বংশপরম্পরায় মৌটুসি যদি তাদের বাচ্চা তুলতে না পারে তাহলে কয়েক যুগ পরে তো তাদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যেমন কাক কোকিলের বাচ্চাও তোলে। কাকও কিন্তু বিলুপ্ত হয়নি। প্রচুর সংখ্যায় কাক আমাদের চারপাশে রয়েছে। তার মানে কাকের মতো মৌটুসিরও কিন্তু টিকে থাকার ক্ষমতা এতোই বেশি যে, নিজের বাচ্চা তোলার পরও সে অন্যের বাচ্চা তুলে থাকে। এই ভাবে শক্তিশালী পাখিরা মাঝে মধ্যে অন্যের বাচ্চাও তুলে দেয়।
বাসা তৈরির তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরও মজার ব্যাপার হলো মৌটুসি বাসা করে একটি ঝোলা বা ব্যাগের মতো। এর মধ্যে একটা ছোট্ট ছিদ্র থাকে। যেমন বাবুই পাখির ঝুলে থাকা বাসার প্রবেশ পথটা একটি পাইপের মতো। এর ফলে অন্য পাখিরা সহজে ভেতরে ঢুকতে পারে না। তাই বাবুইয়ের বাসায় অন্য পাখিরা ডিম পাড়তে পারে না।
‘আর মৌটুসির ঝুলন্ত বাসার পাশেই একটি গোল ছিদ্র রয়েছে। এই গোল ছিদ্র দিয়ে ওই শুধু ঢুকতে পারে। একটা বড় পাখি মোটেই এর ভেতর দিয়ে ঢুকতে পারে না। ঢুকলে ছিঁড়ে যাবে বাসাটা। কোকিল এসে মৌটুসির ঝোলার উপরে বসে ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে ডিমটা ভেতরে ফেলে দেয়। ’
এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, মৌটুসি পাখির জীবনে এমন অদ্ভুত ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে থাকে যে, সে নিজের বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে। একদিন হঠাৎ দেখা গেলো, কারও ঘরে অন্য পাখির বাচ্চা বড় হয়ে উঠলো। এটা খুব ঘন ঘন ঘটে না। খুব কম চোখে পড়ে আমাদের। কাকের বাসায় কোকিলের বাচ্চা আমাদের বেশি চোখে পড়ে।
‘মৌটুসির বাসায় এ ঘটনা খুবই কম চোখে পড়ে কারণ, মৌটুসিরা লুকিয়ে বাসা বানায়। অনেক সময় মানুষের বাসার আশেপাশেও সে বাসা করে। কারণ, মানুষের বাসার আশেপাশে হলে তখন আর কোকিল আসবে না তার বাসায়। কোকিল লাজুক পাখি বলে মানুষের থেকে দূরত্বে থাকে। আর এই ব্যাপারটি অনুধাবন করেই মৌটুসিরা মানুষের বসতির কাছাকাছি বাসা তৈরি করে। ’
সুরেলা কোকিল যদিও আমাদের কোকিল প্রজাতিদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, তারপরও কিন্তু মৌটুসির চেয়ে দশগুণ বড়। দুই জাতের মৌটুসি আমাদের চারপাশে সর্বদা বিচরণ করে। একটি হলো বেগুনি-মৌটুসি (Purple Sunbird) এবং অন্যটি বেগুনি-কোমর মৌটুসি (Purple-Rumed Sunbird)। এদের দুই প্রজাতির আকার প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বলে জানান প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
বিবিবি/এসএনএস