ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাথরে বসে থাকা ‘করঞ্জিয়া’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
পাথরে বসে থাকা ‘করঞ্জিয়া’ রেল লাইনে বসে আছে করঞ্জিয়া/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেললাইন ধরে পশ্চিমদিকে এগিয়ে চলেছি। নানান পাখপাখির কলতান মুখরিত করে রেখেছে চারদিক। চলতি পথে চোখে পড়েছে অনেক প্রজাপতির আনাগোনা। তাদের অনেকগুলোই রঙ-বৈচিত্র্যের আধিপত্য ততোটা উজ্জ্বল নয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশের অনেক উপাদানই স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এখানে। তাই নতুন কিছু দেখার স্পৃহা মনে দানা বেধে রয়েছে।

 
 
দুপুর সময় গড়িয়ে যেতে হঠাৎই একটি বর্ণিল প্রজাপতি এসে পাশে ভিড়লো। এদিক-ওদিক উড়াউড়ি করছে সে। কিন্তু গাছের ডালে বা অন্য কোনো স্থানে বসছে না। অনেকক্ষণ পর তার সুমতি হলো। এই বিরামহীন ডানামেলে বোধহয় বেচারা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। মাটি স্পর্শ করে বয়ে চলা রেললাইনের উপর সে গিয়ে বসলো।  
 
সেখানে কিছুক্ষণের বিশ্রামের পর আবার সে গিয়ে বসলো রেললাইনের পাথরের উপর। হয়তো এখানেই রোদের উত্তাপ গায়ে মাখছে। তখনই তার আলোকচিত্রটি ধারণ করা সম্ভব হলো।    
রেল লাইনে বসে আছে করঞ্জিয়া/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনপ্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রজাপতির বাংলা নাম ‘করঞ্জিয়া’। এর ইংরেজি নাম Commander এবং বৈজ্ঞানিক নাম Moduza procris। নিম্ফালিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই প্রজাপতিটির ডানার ব্যাস প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।  
 
রঙের বর্ণনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পুরুষ ও মেয়ে উভয়েরই ডানার ওপরে কালো, সাদা, কমলা রঙের বিভিন্ন আকৃতির দাগ দেখা যায়। সম্মুখ ও পশ্চাৎ পাখনার ডিসকাল অংশে সাদা রঙের বিভিন্ন আকৃতির দাগ ক্রমশ সরু হয়ে পশ্চাৎ পাখনায় শেষ হয়েছে। সামনের পাখনার সাব-এপিকাল অংশে চারটি করে সাদা দাগ রয়েছে।
 
সামনের ও পেছনের দুই সারি কালো রঙ আলপোনার আঁকাবাঁকা সাব-মারজিনাল অংশ দিয়ে বয়ে গেছে। করঞ্জিয়ার পাখনার নিচে সাদাটে, যেখানে ওপরের সাদা দাগগুলো বেশ দৃশ্যমান। এর অ্যান্টেনা দু’টি কালো বর্ণের তবে ডগাটি কমলা বর্ণের হয় বলে জানান এ গবেষক।  
 
এর প্রাপ্তি সম্পর্কে অমিত কুমার নিয়োগী বলেন, করঞ্জিয়া আমাদের দেশের সব অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এদের সাধারণত উঁচু গাছের বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। বসন্তকালে এদের আধিক্য বেশি লক্ষ্য করা যায়। এরা মাঝে মাঝে বনের নিচু গাছগুলোতে এসে ডানা প্রসারিত করে রোদ পোহায়। অন্য প্রজাতির প্রজাপতির সঙ্গে প্রায়সই ক্ষণিক যুদ্ধে লিপ্ত হয় এরা। ফুলের নির্যাস খেয়ে জীবন ধারণ করে। এরা কদম বা Burflower-tree (Neolamarckia cadamba) গাছে ডিম পাড়ে।  
 
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)  এর ‘লাল তালিকা ২০১৫’ তে এদের বাংলাদেশে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ (LC) বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৭
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।