ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কেশরওয়ালা ‘সিংহ বানর’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৭
কেশরওয়ালা ‘সিংহ বানর’ গাছের ডাল বলে আছে সিংহ বানর- ছবি: সাঈদ বিন জামাল

মৌলভীবাজার: কিছুক্ষণ আগে আলো ফুটেছে প্রকৃতিতে। সকালের মিষ্টি রোদে চারপাশ অপূর্ব ঝলমলে! মকড়সার জালে আটকে থাকা রাতের শিশির আর আলোর খেলাটুকুর নিরন্তর খেলা দেখতে দেখতেই একপাশের ডালপালা হঠাৎ নেড়ে ওঠে!

লাউয়াছড়ার সকালটা তখন স্নিগ্ধ বাতাসময়। গাছগুলো নড়ে ওঠার অর্থ কোনো প্রাণীর আগমন।

তাকাতেই দেখা মিললো ‘শাখামৃগ’ অর্থাৎ বাঁদর! পরিবারপরিজনসহ তাদের আগমন।

একটু ভালো করে দেখা গেলো– এরা প্রত্যেই কুলু বানর! এদের সিংহ বানরও বলা যায়। প্রধান পুরুষটির রয়েছে সিংহের মতো দারুণ কেশর। দলপতির আকৃতি বেশ হৃষ্টপুষ্ট ও বেশ গম্ভীর চাহনির অধিকারী। সম্ভবত ‘মেপে-মেপে’ কথা বলার অভ্যাস রয়েছে তার।

আশ্চর্যভাবেই লক্ষ্য করা যায়- বাঁদরের দল সদলবলে নেমে পড়েছে মাটিতে। প্রায় সবাই লেজ উল্টিয়ে পিঠের দিকে খাড়া করে রেখেছে। মাথার চাঁদি থেকে মুখ ছোট! বৃক্ষবাসী থেকে ক্ষণিকের মৃত্তিকাবাসী হতে তাদের সময় লেগেছে মাত্র কয়েক মিনিট। গাছের ডাল বলে আছে সিংহ বানর- ছবি: সাঈদ বিন জামালবন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও প্রকৃতিপ্রেমী সাঈদ বিন জামাল বাংলানিউজকে বলেন, এই বানরের কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন- কুলু বান্দর, সিংহ বানর, উল্টোলেজি বানর কিংবা ছোট লেজি বানর। ইংরেজিতে বলে Northern pig-tailed macaque। এরা বৃক্ষবাসী এবং দিবাচর। শক্ত সমর্থ পুরুষের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে পঁচিশটির মতো দলবদ্ধভাবে বাস করে।

এর আকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা দৈর্ঘ্যে ৪০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের লেজ ১৮ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। দেহ হালকা বাদামি রঙের। পিঠের রং হালকা সোনালি থেকে বাদামি। মাথার মাঝখানে চ্যাপ্টা ও কালচে। দেহের ওপরের অংশ জলপাই ধূসর, নিচের অংশ ধূসর সাদা। বয়স্ক দলনেতার মাথায় কখনো কখনো কেশর দেখা যায়। গাছের ডাল বলে আছে সিংহ বানর- ছবি: সাঈদ বিন জামালখাদ্য তালিকা ও অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, গাছের ফল-ফলাদি, কচিপাতা, শস্য, কীট-পতঙ্গ, পাখির ডিম ইত্যাদি এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে। মাঝে মধ্যে মানুষের শস্য ভূমিতেও হানা দেয়। এদের আবাস মিশ্র চিরসবুজ বনের গভীর এলাকা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ বনাঞ্চলে দেখা যায় এদের।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এই প্রজাতিটিকে বাংলাদেশে ‘দুর্লভ ও বিপন্ন’ হিসেবে এবং বিশ্বে ‘সংকটাপন্ন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে বলে জানান বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
বিবিবি/জিপি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।