লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের সেগুনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সিলেট বিভাগের ‘লন্ডনি’ বা প্রবাসীরা লাউয়াছড়ার সেগুন কাঠকে এভাবেই মূল্যায়ন করে রেখেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আর এ ‘সোনার হরিণ’ পেতে কমলগঞ্জ উপজেলার গাছ চোরদের অগ্রিম বুকিং দিয়ে থাকেন তারা। আর গাছ চোরেরা সংশ্লিষ্ট থানাসহ অন্য বিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করে নেমে পড়েন সংরক্ষিত বনের সেগুনের হরির লুটে!
লাউয়াছড়ার সেগুন চোরেরা গাড়িওয়ালা! তারা কার, নোহা, হাইএস, মাইক্রো গাড়ি নিয়ে সেগুন গাছ চুরি করতে আসেন। তাদের প্রত্যেকেরই বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। তারা স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ায় প্রশাসনকেও তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারেন।
লাউয়াছড়ার সেগুন চোরেরা বেশ বিত্তশালী এবং যত্র-তত্র প্রভাব দেখান। বিনা পুঁজিতে এ ব্যবসা করেন তারা।
কয়েক দশক ধরে সেগুনের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় এভাবে সবাইকে ম্যানেজ করে কাটতে কাটতে বর্তমানে প্রায় সেগুনশূন্য হয়ে পড়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
গত ০১ মে কমলগঞ্জ উপজেলার রামপাশা গ্রামের প্রভাবশালী সেগুন চোর রুমানের সহযোগী জুনায়েদ গ্রেফতার হন।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন অজানা তথ্য পেয়েছে বন বিভাগ। জিজ্ঞাসাবাদে জুনায়েদ বলেন, ‘লন্ডনিরা বাংলাদেশে এসে লাউয়াছড়ার সেগুন কাঠের জন্য আমাদেরকে পঞ্চাশ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা অগ্রিম দিয়ে যান। মৌলভীবাজার শহরের কিছু কাঠ ও স’মিল ব্যবসায়ীরাও আমাদেরকে লাউয়াছড়ার সেগুনের জন্য আগাম বুকিং দিয়ে থাকেন’।
বন বিভাগের মৌলভীবাজারের রেঞ্জ কর্মকর্তা চম্পা লাল বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের নিলামে সেগুনের একেক ‘বেড়’ (প্রস্থ) এর ওপর একেক দাম নির্ধারিত। ১ ফুট থেকে ১ ফুট ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত সেগুন কাঠের দাম গোল অংশে ৫৬০ টাকা, চিরাই অংশে ১ হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬ ফুট থেকে ৬ ফুট ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত সেগুন কাঠের দাম গোল অংশে ১ হাজার ৮শ’ টাকা এবং চিরাই অংশে ২ হাজার ২শ’ টাকা রয়েছে।
জুনায়েদ আরো বলেন, ‘কমলগঞ্জ থানা পুলিশ, বন বিভাগ ও সিপিজি গ্রুপের (যৌথ টহল বাহিনী) সদস্যদের ম্যানেজ করে আমরা লাউয়াছড়ায় সেগুন কাটতে আসি। বর্তমানে লাউয়াছড়াতে বন বিভাগের টহল জোরদার হওয়ায় একটি সেগুন গাছের জন্য বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয় আমাদের’।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি আসার আগে লাউয়াছড়ায় প্রতি সপ্তাহেই দু’একটি করে সেগুন কাটা যেতো। আমি আসার পর বর্তমানে এ ১৮ মাসে ৮টি সেগুন গাছ কাটা হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে ৫টি সেগুন গাছের কাঠ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। সবগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘কমলগঞ্জের রামপাশার রুমান, সেলিম প্রমুখ দুর্ধর্ষ সেগুন চোর। তারা পার্টির কাছ থেকে লাউয়াছড়ার সেগুনের জন্য অগ্রিম টাকা নিয়ে তারপর মাইক্রোবাসে করে গাছ কাটতে আসেন’।
সিলেট বন্যপ্রাণী রেঞ্জের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো এর নির্দেশে অভিযুক্ত অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বর্তমানে লাউয়াছড়ায় টহল ব্যাপক জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান সহকারী বন সংরক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৪ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর