হাকালুকি কিংবা হাইল হাওরের আনাচে-কানাচে ‘মাখনা’ উদ্ভিদের ব্যাপক উপস্থিতি। আমাদের এলাকার হাওর-বিলের বহু পরিচিত ফল বলে হাওরপাড়ের বাসিন্দারা মাখনাকে ‘সুস্বাদু’ হিসেবে অভিনন্দিত করে রেখেছেন।
পাতা এবং ফুলে রয়েছে রঙের দারুণ বৈচিত্র্য। এর পাতাগুলো ঢাল আকৃতির এবং কুঁচকানো। পাতাটির উপরেরভাগ ঘন সবুজ নিচের অংশ কালচে ও নীলাভ বেগুনি রঙের। পাতার প্রস্থ প্রায় ১ দশমিক ২ মিটার।
ফুলের ভেতরের অংশ উজ্জ্বল লাল এবং বাইরের অংশ চকচকে সবুজ রঙের। ফুলটি আড়াই থেকে ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। মাখনা ফল কাঁটাযুক্ত এবং ফলের ব্যাস ৫-১০ সেন্টিমিটার।
মাখনা এক প্রকারের জলজ ওষুধি উদ্ভিদ। ওষুধি গুণসম্পন্ন এই উদ্ভিদের বীজটি শারীরিক বলবর্ধক এবং কামোত্তেজক। পাতাটি বাত রোগের জন্য উপকারী বলে ভেষজশাস্ত্র থেকে জানা যায়।
মৎস্য গবেষক এবং রাজধানী উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের জীববিজ্ঞানের প্রভাষক একে জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এটি ‘মাখনা’ ফল। স্থানীয়রা বিশেষ করে সিলেটিদের কাছে এটি ‘ফকুল’ নামে পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Foxnut এবং বৈজ্ঞানিক নাম Euryale ferox। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের স্থানীয় উদ্ভিদ।
তিনি বলেন, মাখনা বিল ও হাওরে জন্মে। লাল শাপলার মতোই তবে কাঁটাভরা গাছ। এদের পাতা বিশাল। ভিক্টোরিয়া অ্যামাজনিকা প্রজাতির পর উদ্ভিদরাজ্যে এরাই দ্বিতীয় বৃহত্তম। এদের ফুল গোলাপি রঙের। আকারে শাপলার চেয়ে ছোট। ফুল ফোটে শীতের শেষে। কাঁটাভরা ফলে অনেকগুলো বীজ এবং বীজগুলো খাবার যোগ্য।
খাবার কৌশল উল্লেখ করে প্রভাষক জহিরুল ইসলাম বলেন, কাঁটাযুক্ত বলে একটু সতর্কতার সঙ্গে পরিশ্রম করে এই ফলটি খেতে হয়। ওপরে কমলার মতো আবরণটি ফেলে দিতে হয়। তারপর ভেতরে বাদামের মতো কোয়া অংশগুলোকে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। ফলটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ফ্যাট, প্রোটিন এবং খনিজ লবণ রয়েছে।
পুরান ঢাকান বাবু বাজার, নয়া বাজার, ইসলামপুর, বড়কাটরা ছোটকাটরার বিভিন্ন স্থানে প্রতি পিস মাখনা ফল ২০ টাকা করে বিক্রি হয়ে থাকে। এই ফলের ছবিটি বুধবার (১০ মে) ছোটকাটরা থেকে তুলেছেন বলে জানান জহিরুল।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
বিবিবি/জিপি/বিএস