ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অনেক দেখেছেন ‘লোপামুদ্রা’কে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
অনেক দেখেছেন ‘লোপামুদ্রা’কে আবাসিক প্রজাপতি লোপামুদ্রা, ছবি : অমিত কুমার নিয়োগী

মৌলভীবাজার: হয়তো সে আপনার আশেপাশেই থাকে। চলার পথে অলস বিকেলে কিংবা রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে ওর সঙ্গে কখনও না কখনও হয়তো দেখা হয়ে গেছে আপনার। বর্ণিল ডানায় ভর করে বাতাসের উপর দিয়ে কী অপূর্বভাবেই না সে আপনার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছিল কোনো একদিন!

অথবা আপনি হাঁটছেন। ব্যস্ততায় পার করছেন কর্মমুখর দিনের প্রতিটি ধাপ।

এগিয়ে যাবার এ গতির মাঝে হঠাৎ চোখ গিয়ে পড়লো তার উপর। সে হয়তো দিব্বি বসে আছে তখন। একেবারে চুপচাপ। রঙিন ফুলের গায়ে। কিংবা মাটির অন্তঃপুর থেকে গজিয়ে উঠা সবুজ ঘাসের বুকে।  

এভাবে হঠাৎ করে আপনার চলার পথে দেখা হয়ে যাওয়া অথবা আপনার চলার পথে আপনাকে শুভেচ্ছা জানানো এ প্রজাপতিটির নাম ‘লোপামুদ্রা’। এর বাংলা নামকরণটি যর্থাথ মুগ্ধতা ছড়ায়। যা শুনতেও দারুণ শ্রুতিমধুর।

লোপামুদ্রা দেখতেও দারুণ সুন্দরী। রঙের বৈচিত্র্য অপরূপভাবে সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে ওর অবয়বজুড়ে। দেহের প্রতিটি কোণায় কোণায় নানান রঙ আপন উজ্জ্বলতা নিয়ে প্রকাশিত।

ভালো করে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলে হয়তো মনে পড়ে যায় - লোপামুদ্রার সঙ্গে আমাদের পূর্বপরিচয়ের খণ্ড খণ্ড মুহূর্তগুলো। তবে অনেক দেখেছেন লোপামুদ্রাকে!

প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, এর বাংলা নাম লোপামুদ্রা। ইংরেজি নাম Redbase Jezebel এবং বৈজ্ঞানিক নাম Delias pasithoe। নিম্ফালিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই অপরূপ সুন্দর প্রজাপতিটির পাখার প্রসারতার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০-৫০ মিলিমিটার। বাংলাদেশে Delias জেনাসের অন্তর্ভুক্ত আরও ৫টি প্রজাতি নথিভুক্ত রয়েছে এগুলো হল Yellow Jezebel (Delias agostina), Red Spot Jezebel (Delias descombesi), Red-breast Jezebel (Delias acalis), Common Jezebel (Delias eucharis) ও Painted Jezebel (Delias hyparete)।

এর শারীরিক রঙের নানান বাহারকে বিশ্লেষণ করে এ প্রজাপতি গবেষক বলেন, পুরুষ ও মেয়ে উভয়েরই ডানার রঙ একই। লাল, হলুদ, কাল, সাদা এই চারটি রঙের সমন্বয়, প্রকৃতি যেন সেজেছে হরেক রকম রঙের স্পন্দনে। পশ্চাৎ ডানার গোঁড়ার দিকের রঙ গাড় লাল, সেলের অর্ধেক লাল ও বাকি অর্ধেক অংশ গাঢ় হলুদ।  

পশ্চাৎ ডানার ডিসকাল ও পোস্ট ডিসকাল অংশ গাঢ় হলুদ সঙ্গে কাল বর্ণের শিরা। ডানার উপ-প্রান্তিক অংশতে কাল মোটা ব্যান্ড রয়েছে। সম্মুখ ডানার ডিসকাল অংশ সাদা। প্রি-ডিসকাল অংশে সাদাটে রঙয়ের লম্বা-মাকু আকৃতির সারিবদ্ধ দাগ রয়েছে। সম্মুখ ডানার সেলের অপরের দিকে একটি সাদা দাগ থাকে। মাথা, বক্ষ ও উদরের রঙ কাল।
 
প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, লোপামুদ্রা আমাদের দেশের সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে শীতকালে এর আধিক্য বৃদ্ধি পায়। ঢাকা শহরে উদ্ভিদ উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এদের মাঝে মধ্যে দেখা যায়। এরা সাধারণত উঁচু গাছে বিশ্রাম নেয়। এরা পাথুরে ছরা বা ছরার ভেজা বালু থেকে এদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। ফুল থেকে মধু খেতে এরা বেশি পছন্দ করে। এরা Santalaceae গোত্রের গাছে ডিম পাড়ে।
 
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা আইইউসিএন লাল তালিকা ২০১৫ লোপামুদ্রাকে বাংলাদেশে কম ঝুঁকিপূর্ণ (Least Concern) বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
বিবিবি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।