ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

মানুষ এতো অমানবিক কেন!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
মানুষ এতো অমানবিক কেন! ওজন বাড়াতে গলা চেপে চেপে খাওয়ানো হচ্ছে হাঁসকে। ছবি ও ভিডিও: আসিফ আজিজ

সাঘাটা, গাইবান্ধা: হাঁস গলা পর্যন্ত খায় বলে একটি বচনও চালু রয়েছে। কেউ বেশি খেলেই তাকে হাঁসের সঙ্গে তুলনা করা প্রচলিত হয়ে গেছে। স্বাভাবিক পরিবেশে খাবার পেলে হাঁস পেটপুরে খাবেই। অসুখ আর নতুন পরিবেশ না হলে এর ব্যতিক্রম হয় খুব কম।

কিন্তু মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সাঘাটার উল্যা বাজারে যা দেখা গেলো সেটা পুরোপুরি অস্বাভাবিক, অমানবিক, অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় ছাড়া কিছুই নয়।  

বন্যাকবলিত এ উপজেলার মানুষের পাশাপাশি চরম বিপর্যয়ে বাড়ির পোষা প্রাণীকুল।

গরু-ছাগলের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি। পানির তোড়ে ভেসে গেছে অনেকের গৃহপালিত পশু-পাখি। যারা রাখতে পেরেছেন তারাও খাদ্য, রাখার জায়গার সংকটে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রি করতে।

বাজারের যে সড়কের মুখে বালির বস্তা ফেলে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে বন্যার পানি, ঠিক তার বিপরীত দিকের সড়কের মুখে সারি ধরে বসে দেখা গেলো হাঁস বিক্রি করতে। এই পর্যন্ত বিষয়টা স্বাভাবিক।  হাঁস নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা।  ছবি: আসিফ আজিজঠিক পাশের একটি বন্ধ দোকানের বারান্দায় হাঁসের ডাক আর ক’জন মানুষের জটলা দেখা গেলো। পাশের একটি জালঢাকা ঝুড়ি থেকে একটি করে হাঁস বের করা হচ্ছে আর খাওয়ানো হচ্ছে কাঁকর মেশানো খুদ।  হাঁসগুলো খেতে চাইছে না। তাই দু’জনে মিলে চেপে ধরে জোর করে ঠেসে পুরে দিচ্ছে মুখ ফাঁক করে। গলা দিয়ে পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে চেপে টেনে টেনে। ততক্ষণে নিরীহ এ প্রণীটির দমবন্ধ অবস্থা। মোটামুটি মুঠোখানেক খাওয়ানোর পর ছেড়ে দিয়ে পাঠানো হচ্ছে রাস্তার পাশের বিক্রেতার কাছে। আর পুরো বিষয়টি চলছে প্রকাশ্যে।  

নতুন জায়গায় খেতে চাইছে না বলে যিনি খাওয়াচ্ছিলেন, তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পাশেরজন বললেন, ভাই কী করবো? ওজন বেশি না হলে ক্রেতা নিতে চায় না।  

কেজি হিসেবে বিক্রি হয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, পিস হিসেবে বিক্রি হয়, তারপরও ওজন বেশি না হলে বিক্রি হতে চায় না। তাই এ ব্যবস্থা।  

আশপাশের লোকজন বিষয়টির প্রতিবাদ না জানিয়ে মজা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করছিলেন।  

খাওয়ানো হাঁসগুলোকে রাখা হয় রাস্তার ওপর পা বেঁধে। রীতিমতো জবুথবু সব। কেউ বসে ঘাড় বাকিয়ে চোখ বন্ধ করে।

বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাঁস এখন বেশি আসছে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে। জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা। যোগান বেশি থাকলেও দাম কমেনি। বরং একটু বাড়তি।
হাঁস নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা।  ছবি: আসিফ আজিজসে যাইহোক, অবলা প্রাণীকে জীবিত অবস্থায় এতো কষ্ট দেওয়া, তাদের সঙ্গে এতো অমানবিক আচরণ করা বোধহয় কেবল মানুষের পক্ষেই সম্ভব!

সেদিন সুন্দরগঞ্জে ঘোড়ার গাড়িতে একগাদা কাঠ চাপিয়ে নিয়ে যেতে দেখে কিশোর অটোচালক রবি বলেছিল, ‘ভাইয়া দেখেন একটা ঘোড়ায় টানা গাড়িতে কত জিনিস চাপাইছে। ওদেরও তো কষ্টা আছে নাকি। ওরাও তো ‘মানুষ’! 

রুমে ফিরে সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করলেও রবির সে কথার কোনো উত্তর ওই মুহূর্তে দিতে পারিনি!

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এএ/এইচএ/

আরও পড়ুন
** পানির তোড়ে ওষুধ বিক্রেতাও খোলা রাস্তায়
**‘আইজ  হামাক খাবার নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাব’
**রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া

** গম-ভুট্টা-পাটক্ষেতের উপর দিয়ে চলছে নৌকা!
** পচা ড্রেনে ছিপ ফেলে কেজি কেজি মাছ!
** নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা!
** তিতুমীরে হিজড়া-ভিক্ষুকের রাজত্ব!
** পেরেছে কলকাতা-রাজশাহী, পারলো না শুধু ঢাকা!
** ‘নির্বাচিত হলে গ্রামেও আনবো ডিজিটাল সুবিধা’
** এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব
** ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ'লীগ অফিসে

** এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।