ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উড্ডয়নে শক্তিশালী অপূর্ব ‘হলদে খঞ্জর’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
উড্ডয়নে শক্তিশালী অপূর্ব ‘হলদে খঞ্জর’ উড্ডয়নে শক্তিশালী অপূর্ব ‘হলদে খঞ্জর’। ছবি: অমিত কুমার নিয়োগী

মৌলভীবাজার: সাদা, কালো, হলুদ আর সবুজে রাঙা প্রজাপতিটির শারীরিক সৌন্দর্য দারুণ। পেছনের একটি অংশে খঞ্জর বা লেজের টুকরো রয়েছে।

লেজযুক্ত এ প্রজাপতিটিকে অন্যদের থেকে সহজেই আলাদা করে ফেলা যায়।

চারটি রঙের মধ্যে হলুদই সহজে চোখকে আকৃষ্ট করে এবং লেজযুক্ত বলে প্রজাপতিটির নাম হয়েছে ‘হলদে খঞ্জর’।

উড়ন্ত অবস্থায়ও সে যথেষ্ট শক্তি সঞ্চার করে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ধাবিত হয়। হলদে খঞ্জরের শারীরিক কাঠামো এমন বিশেষভাবেই তৈরি, যেন প্রাকৃতিক ঝোড়ো বাতাস তার পথচলায় বাধা হয়ে দাড়াতে না পারে। উড়ন্ত গতির মাঝেও শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম সে। তার পেছনের পুচ্ছটিও এভাবে দ্রুত ছুটতে সহায়তা করে।

প্রখ্যাত প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে জানান, হলদে খঞ্জরের ইংরেজি নাম Five-bar Swordtail ও বৈজ্ঞানিক নাম Graphium antiphates। এরা ‘লতিকা’ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এদের পেছনের পাখার খাঁজকাটা বাড়তি অংশে লতিকা থাকে, যা খঞ্জর বা লেজের আকার ধারণ করে। উড্ডয়নে শক্তিশালী হলদে খঞ্জর খুবই ছটপটে স্বভাবের।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত Papilionidae বা লতিকা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ২৯টি প্রজাতি লিপিবদ্ধ হয়েছে। আর দুই ধরনের খঞ্জরের খোঁজ মিলেছে। একটি হলদে খঞ্জর (Graphium antiphates) ও অন্যটি চিত্রল খঞ্জর (Graphium nomius)।

তিনি জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে হলদে খঞ্জরদের বেশি দেখা যায়। তবে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর জেলায়ও মাঝে মধ্যে দেখা মেলে।

এই অপরূপ সুন্দর প্রজাপতিটির পাখার প্রসারতার দৈর্ঘ্য ৮০-৯৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুরুষ ও মেয়ে উভয়েরই ডানার রঙ একই ধরনের। মাখনের মতো সাদা, কালো, কুসুম হলুদ ও সবুজ রঙের সমারোহে হলদে খঞ্জর অলঙ্কৃত। মাখনের মতো সাদাটে রঙের মধ্যে কালো রঙের ডোরা। সামনের পাখনার এপিকাল অংশে কালোর মাঝে সবুজাভ ডোরাকাটা। কোস্টাল অংশ সবুজাভ, যার সেলে রয়েছে কালো রঙের ৫টি বার।

পেছনের পাখনার প্রি-ডিসকাল অংশে কুসুম হলুদের ছোপ এবং ডিসকাল ও ব্যাসাল অংশের রং সবুজাভ। যার সেল অংশে ৩টি কালো বার, যা সামনের পাখনার সেলের ৩টি কালো বারের সঙ্গে মিলিত বলে মনে হয়। পেছনের পাখনার পেছনের দিকে লম্বা লেজ রয়েছে, যার রং কালো ও অগ্রভাগ সাদা।

অমিত জানান, এরা সাধারণত উঁচু গাছে বিশ্রাম নেয়। তবে মাঝে মাঝে বনের নিচু গাছগুলোতে এসে ডানা প্রসারিত করে রোদ পোহায়। এরা অন্য প্রজাতির প্রজাপতির সঙ্গে প্রায়ই স্থানের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

এরা পচা বস্তু, প্রাণীর মল, পাথুরে ছরা বা ছরার ভেজা বালু থেকে এদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। ফুল থেকে নেকটার নিতে এদেরকে খুব একটা দেখা যায় না। Annonaceae গোত্রের গাছে ডিম পাড়ে।

আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংস্থার (আইইউসিএন) ২০১৫ সালের লাল তালিকায় হলদে খঞ্জরকে বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ (VU) ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।