তবে এটি মনুষ্যসৃষ্ট। বিস্তৃত নদীর পাড়ে যত্র-তত্র আবাসন গড়ে তোলা, এদিকে-সেদিকে অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন এবং শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলার মাধ্যমে দখলে-দূষণে বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে পুরো নদীটিকেই।
হবিগঞ্জের উপকারী খোয়াই নদী ও পুরাতন খোয়াই নদীকে এভাবেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে খোয়াই ব্রিজে দাড়িয়ে দেখা গেছে, শহর সংলগ্ন এলাকায় মাইলের পর মাইল খোয়াই নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠেছে ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে নদী ও নদীর তীর পড়ে গেছে হুমকির মুখে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় নদীর তলায় পলি ও বালি জমে জমে স্থানে স্থানে চরও পড়েছে।
দেখা গেছে, শহরের সবচেয়ে নিচু স্থানটি থেকে নদীর তলদেশের সর্বোচ্চ স্থানটি ১০/২০ ফুট উঁচু হয়ে উঠেছে। এতে নদীতে ঘিরে থাকা শহর রয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। নদীর অপর পারের গ্রাম ও ফসলি জমিকেও ক্রমাগত সহ্য করতে হচ্ছে ভাঙনের আঘাত।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, খোয়াই নদী ভারতের ত্রিপুরা থেকে উৎপন্ন হয়ে আগরতলা ও খোয়াই শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে কিংবা গা ঘেঁষে লাখাই উপজেলার মাদনায় অল্প উজানে কইরাল গ্রামের কাছে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
পুরো নদীটি ১৭৫ কিমি দীর্ঘ। তবে গতিপথ পরিবর্তন করায় দৈর্ঘ্য কিছুটা কমেছে। বাল্লা সীমান্ত থেকে হবিগঞ্জের বাজুকা-ফরিদপুর গ্রাম পর্যন্ত নদীর দু’পাশে বাঁধের দৈর্ঘ্য ৯০ কিমি। বাকি ৩ কিমিতে বাঁধ নেই। সে হিসেবে বাংলাদেশের হবিগঞ্জের অংশের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৯৩ কিমি।
এদিকে ৪ দশক আগে দুই দফায় ৫ কিলোমিটার ‘লুপ কাটিং’য়ের (আঁকা-বাঁকা সোজা করা) মাধ্যমে গতি পরিবর্তন করে খোয়াইকে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে খরস্রোতা খোয়াইয়ের শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত অংশটি শান্ত হয়ে গেছে। এর নাম ‘পুরাতন খোয়াই নদী’। নদীশাসনের পর গত চার দশকে পুরাতন খোয়াই নদীর আরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাহীনতা ও জনসাধারণের অসচেতনতায় খোয়াইয়ের নাব্যতা কমে গেছে। এতে নদীটি দূষণের শিকার হয়ে হবিগঞ্জের পরিবেশ ও নদীনির্ভর জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলেছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে খোয়াই ব্রিজের তলা ও এর আশপাশে পৌরসভা বর্জ্য ফেলায় নদীর পানি দূষিত ও দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘শহর সংলগ্ন এলাকায় মাইলের পর মাইল নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠেছে ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে নদী ও নদীর তীর এখন মারাত্মক হুমকির মুখে’।
‘এছাড়াও খোয়াই নদী থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। বালু উত্তোলনকারীরা তলদেশের পরিবর্তে দুপাশের বাঁধের গোড়া থেকে বালু-মাটি তোলায় বিভিন্ন স্থানে গতিপথ সরু হয়ে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে’।
তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘পুরাতন খোয়াইয়ের বিভিন্ন অংশ দখল ও পরিকল্পিত-অপরিকল্পিতভাবে ভরাটের শিকার এবং হবিগঞ্জ শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার সর্ববৃহৎ ডাস্টবিনে রূপ নিয়ে নানামুখি দূষণের শিকার হয়েছে’।
‘পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আন্দোলন ও সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করার পরও হবিগঞ্জের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অপরিহার্য খোয়াই নদী ও পুরাতন খোয়াইকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা নজরে পড়ছে না’।
নদীটিকে রক্ষায় জেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সচেতন সুধী সমাজসহ সবাইকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন পরিবেশবিদ তোফাজ্জল সোহেল।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর