ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আপন আলয়ে ফিরলো লক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানাটি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
আপন আলয়ে ফিরলো লক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানাটি  শ্রীমঙ্গলে উদ্ধার লক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানা, ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মানবশিশুর মতোই নিষ্পাপ চাহনি তার। তাকালেই বেশ মায়া জমে যায়। হাতে ধরে কোলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে হয়। শরীরের লোমগুলো বুনো-গন্ধমাখা। সব শিশুই যে মায়াময় এ প্যাঁচক-শিশুটি তার প্রমাণ। 

ডান পায়ে রয়েছে তার আঘাতের অদেখা চিহ্ন। আঘাতের বিষয়টি অনুমান করা গেলো এভাবে যে, তার ডান পা বারবার তুলে রাখছে।

খাঁচা থেকে উন্মুক্ত করে দিলেও পারছে না উড়তে। ওড়া এখনো শেখা হয়নি বলেই বিশাল আকাশ আর অনতিদূরের গাছগুলো তাকে এখনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে না। কেবল মাটি ও ঘাসের স্পর্শেই সে নিরাপদ।  

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার দারাগাঁও চা বাগান থেকে আহত একটি লক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানা উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে আনা হয়।  

পাখিপ্রেমী রবি কস্তা একটি লক্ষ্মীপ্যাঁচা উদ্ধারের কথা মৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমানকে জানালে তিনি উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।  

রবি কস্তা বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় ছানাটিকে দারাগাঁও চা বাগানের লোকদের হাতে আমি দেখতে পাই এবং উদ্ধার করে নিজের কাছে নিয়ে আসি। কেক খেতে দিয়েছি। পুরো কেক সে খেয়েছে। পরে আমি এসিএফ স্যারকে বিষয়টি জানাই। তিনি গাড়ি পাঠিয়ে এটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।  

রবি আরো বলেন, দারাগাঁও চা বাগানের ৮ নম্বর সেকশনে পাখি শিকারের দল গুলতি দিয়ে ঘুঘু শিকার করতে গিয়ে এই লক্ষ্মীপ্যাঁচার বাচ্চাটিকে মেরেছে। পাখিটি মাটিতে পড়ে গেলে তারা ধরে নিয়ে আসে।  

শ্রীমঙ্গলে উদ্ধার লক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানা, ছবি: বাংলানিউজলক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানাটির সুরক্ষায় বন্যপ্রাণী গবেষকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন যে তাকে যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানেই উন্মুক্ত করা হলে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।  

এ বিষয়ে (এসিএফ) তবিবুর রহমান বলেন, আমি বন্যপ্রাণী গবেষকের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম ছানাটিকে আমাদের কাছে রেখে লালন-পালন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সর্বাধিক উত্তম পন্থা হলো যেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানকার কোনো গাছের উপর রেখে দেওয়া। তাহলে এক সময় ছানাটির মা এসে তাকে খুঁজে নেবে।  

পরে বন্যপ্রাণীপ্রেমী রবি কস্তা বিকেলে লক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানাটিকে আবার দাঁরাগাও চা বাগানে নিয়ে যান এবং বাগানের ৮ নম্বর সেকশনের গাছের উপর রেখে দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বলেন, বন্যপ্রাণীদের নিজস্ব টেরিটরি রয়েছে। যেখানে তারা নিজেদের নিরাপত্তাসহ খাদ্য সংগ্রহের বিষয়টি আপনা থেকেই নিশ্চিত করে। এই লক্ষ্মীপ্যাঁচার ছানাটিকে তার ওই নিজস্ব স্থানেই ছেড়ে দিলে সে অনেকটাই সারভাইব করে ফেলবে। কিন্তু মানুষের সেবাশুশ্রুষার মাঝে তাকে নিয়ে এলে হয়তো সে সারভাইব নাও করতে পারে।   

লক্ষ্মীপ্যাঁচা প্রসঙ্গে ড. মনিরুল খান বলেন, Common Barn Owl এর ইংরেজি নাম। এরা নিশাচার পাখি। এটি আমাদের দেশে একসময় প্রচুর দেখা গেলেও তাদের বসবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে বর্তমানে এরা বিপন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এদের উচ্চতা প্রায় ৩৬ সেন্টিমিটার। এদের রয়েছে হালকা সোনালি পিঠ, সাদা পেট ও সোনালি-হলুদ লেজ। বুক, পেট ও লেজের মধ্যে ছোট অসংখ্য দাগ।  

এরা সাপের মতো ‘হিসস হিসস’ শব্দ করে ডাকে এবং সাদা পানপাতার মতো মুখমণ্ডলের জন্য লক্ষ্মীপ্যাঁচাদের সহজে চেনা যায় বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।