বন্য পথে হাঁটতে গিয়ে বহুবার শ্যামার ‘ওই-অ-লী-নাউ... ওই-অ-লী-নাউ...’ ডাকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠার সুযোগ হয়েছে। এ ডাক এতোটা তীব্র নয়; তবে মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করলে কান এড়িয়ে যেতে পারে না এ সুমিষ্ট ডাক।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, দোয়েল ও শ্যামার এক ‘গণ’। দোয়েলের বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis এবং শ্যামার বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus malabaricus। নামের প্রথম অংশটা এক। বৈজ্ঞানিক নামটা কিন্তু হয় ‘ল্যাটিন’ শব্দ। এই ল্যাটিন শব্দ দিয়ে পাখিদের বৈজ্ঞানিক নামটি দেওয়া হয়েছে এবং সারা পৃথিবী এটি অনুসরণ করে।

দু’টি পাখির বিস্তৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির দোয়েল ও শ্যামা পাওয়া গেলেও আমাদের দেশে মাত্র একটি প্রজাতির দোয়েল এবং একটি প্রজাতির শ্যামা পাওয়া যায়। দেশে যেহেতু একটাই প্রজাতির দোয়েল ও শ্যামা রয়েছে; তাই মুখে বলার সময় তাদের শুধু ‘দোয়েল’ এবং শুধু ‘শ্যামা’ বললেই চলে। কিন্তু লিখতে হলে পুরো নামটা বলতে হবে। আমরা সুস্পষ্টভাবে পাখি দু’টিকে আলাদাভাবে চেনার জন্য ইংরেজি নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা নামকরণ করেছি ‘উদয়ী দোয়েল’ (Oriental Magpic Robin) এবং ‘ধলা-কোমর শ্যামা’ (White-ruped Shama)।
বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, গ্রাম-শহরসহ দেশের সর্বত্র দোয়েল পাওয়া গেলেও শ্যামা কিন্তু শুধু বনেই পাওয়া যায়। এরা একেবারে বনের পাখি। নিজের এলাকার গাছের ডালে বসে এলাকাটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদিন ধরে গান করতে গাইতে থাকে। তবে তার গানের স্বর মৃদু। স্বর শুনে বনে হাঁটার সময় আমরা বুঝতে পারি এটি শ্যামার ডাক। আবার কিছু দূর অগ্রসর হলে আরেকটি এলাকায় অপর একটি শ্যামা ডাকে। এই ডাকে মাধ্যমেই ওই বনে শ্যামার উপস্থিতি আমরা বের করি, জানান তিনি।

এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও পোকা। এগুলো আমাদের বনে এখন কমে গেছে বলে শ্যামাদের অবস্থায় কিছুটা বিপন্ন বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।
মৌলভীবাজার রেঞ্জের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী আদমপুর বিট থেকে শ্যামা পাখির ছবিগুলো তুলেছেন বলে জানান সৌখিন আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
বিবিবি/এএ