এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন অধ্যাপক মান্নান। একটি গাছ থেকে কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে হাতে নিয়ে ডলতে ডলতে নিয়ে শুকতে বললেন।
মাথা নেড়ে না-সূচক জবাব দিলাম। তখন এক গাল হেসে দিয়ে বললেন, এটা কর্পূর গাছ। কর্পূরের তেলের নাম শুনেছো? হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলাম। ঠাণ্ডা লাগলে এখনও মানুষ এই তেল বুকে মাখে। এছাড়াও কর্পূরের আরও অনেক ওষুধি গুণ রয়েছে বলে সামনে হাঁটতে শুরু করলেন।
কিছু দূর এগুতেই আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন। একইভাবে আরেকটি গাছের পাতা ছিঁড়ে হাতে ধরিয়ে দিলেন। গাছের নাম শ্বেত চন্দন।
আমলকি, হরিতকি, বহেড়া, দারুচিনি, গোলমরিচ, মদন ফল, গাওজাবান, বিড়ঙ্গ, যষ্টিমধু, পাথরকুচি, লাল চন্দন, গুগগুল, জৈত্রী, জয়ফল, পারুল, কন্টিকারী, গোক্ষুর, ভেরেণ্ডা, অর্ক, ঈশ লাঙ্গলা, সোনালু, তুলসী, রুদ্রাক্ষ, উদম্বর, বাসক, গন্ধ ভাদালী, গুলঞ্চ, ভৃঙ্গরাজ, হাতিশূর, সর্পগন্ধা, হিলমোচিকা, তালমাখনা, অশোক, রিটা, অপরাজিতা, দেবধূপসহ নানা জাতের ফুল, ফল ও ওষুধি গাছ ছাড়াও বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছ দীর্ঘ সময় ঘুরে ঘুরে দেখান অধ্যাপক মান্নান।
যা দেখে দুচোখ জুড়িয়ে যায়, ভরে যায় প্রাণ। এ যেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের বিরল প্রজাতির গাছের সাম্রাজ্য!
অধ্যাপক আব্দুল মান্নান ১৯৫৬ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার গোকুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করেন। সর্বশেষ স্থানীয় শিবগঞ্জ এম এইচ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১৬ সালের জুনে চাকরি জীবনের ইতি টানেন।
ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালার প্রতি ভীষণ নেশা ছিলো তার। সে সময় বাড়ির উঠান ও আশপাশ দিয়ে গাছ লাগাতে শুরু করেন অধ্যাপক মান্নান। সময়ের ব্যবধানে নিজ গ্রামে নিজ জমিতে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে গড়ে তোলেন সবুজ নামের একটি নার্সারি। তার দেখাদেখি ওই এলাকায় ধীরে ধীরে অনেকেই গড়ে তোলেন আরও নার্সারি। এরপর নার্সারির নেশাকে বাণিজ্যিক রূপ দেন অধ্যাপক মান্নান।
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে বৃক্ষপ্রেমী এই অধ্যাপক জানান, প্রায় দুই যুগ আগে পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে বিরল প্রজাতির গাছ সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। ভারত থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিলুপ্তপ্রায় বিরল প্রজাতির নানা ধরনের গাছ এনে নার্সারিতে যুক্ত করতে থাকেন।
প্রায় ৬৫ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা নার্সারিতে ৮ বিঘা জমি পৃথক করেন। সেই জমিতে লাগাতে থাকেন এসব বিরল প্রজাতির গাছ। বিরল প্রজাতির গাছের সাম্রাজ্য গড়তে ওই জমিতে লাগানো অন্য গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরও বছরখানেকের মতো সময় লাগবে বলেও জানান অধ্যাপক মান্নান।
নার্সারির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, আমার জীবদ্দশায় অনেক গাছ ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয় গেছে। আরও অনেক প্রজাতির গাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী প্রজন্ম গাছগুলোর সম্পর্কে কোনকিছুই জানতে পারবে না। আগামী প্রজন্মের সামনে বিরল প্রজাতির গাছগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
এমবিএইচ/এমজেএফ