গাছের গোড়ার দিকে লোহার চিকন রড পুঁতে তার মাথায় লাগানো স্টিলের প্লেটটি। ময়লার ছাপ থাকলেও বাংলায় লেখা বর্ণগুলোয় চকচক করে ‘ঈশ্বরমূল’ শব্দটি।
গাছটির দেখা মিললো বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) একুশ শতকের বাগানে। ঈশ্বরের মতো তারও এ উদ্যানে একাকি বসবাস। আরডিএ’র হার্বাল জার্মপ্লাজম সংগ্রহশালায় ঈশ্বরমূলের একটি গাছই রয়েছে। এছাড়া ইশ্বরমূলের মতো বিলুপ্তপ্রায় আরো ২৯টি বিরল প্রজাতির বৃক্ষও রয়েছে এখানে।
মূল বাগানের প্রধান ফটক হয়ে রাস্তা ধরে সোজা কিছুটা পশ্চিমে যেতে হবে। সেখান থেকে বামের রাস্তা ধরে পৌঁছাতে হবে দক্ষিণের শেষপ্রান্তে। সেখানেই চোখে পড়বে হার্বাল জার্মপ্লাজম সংগ্রহশালার সাইনবোর্ড।
এখানে সাইনবোর্ডে গাছের নামের পাশাপাশি বৃক্ষের যে অংশগুলো ব্যবহার করা হয়, সে নামগুলোও সুন্দরভাবে লেখা আছে। সঙ্গে যে সব রোগের উপশম হবে, তাও উল্লেখ করা আছে সাইনবোর্ডে। ‘ভরা পেট খায়, মরণ পাছে যায়’, এরকম খনার বচন লেখা একাধিক ছোট ছোট সাইনবোর্ড চোখে পড়বে বাগানের বিভিন্ন স্থানে। ফলে পরিদর্শনে আসা সাধারণ মানুষেরাও জানতে পারবেন এসব গাছের ওষুধি গুণাগুণ ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে।
বাগানের এ অংশটি বর্তমানে অর্জুন, আগর, আমলকি, কর্পূর, কামিনী, কালোজাম, কালো মেঘ, গোলাপ, ঘৃতকুমারী, চই, ঈশ্বরমূল, ডালিম, তেজপাতা, তেঁতুল, তুলসী, থানকুনি, দারুচিনি, নাগেশ্বর, মিম, নিশিন্দা, পাথরকুচি, পানা, শিমুল, বহেড়া, মেহেদী, শ্বেতচন্দন, তীলক, আটিশ্বর, হরিতকি ও বেল জাতীয় ওষুধি প্রজাতির গাছের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।
বাগান সম্পর্কে কথা হয় বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) পরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী ড. একেএম জাকারিয়া সঙ্গে। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগ প্রশিক্ষণার্থী এসব গাছের নাম জানে না। আবার কেউ কেউ জানলেও এসব গাছের ব্যবহার ও গুণাগুণ সম্পর্কে জানে না। তাদেরকে হাতে-কলমে শেখানোর জন্য হার্বাল জার্মপ্লাজম গড়ে তোলা হয়েছে। সময় ও চাহিদা অনুসারে এখানে আরও বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় বিরল গাছের সমন্বয় ঘটানো হবে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো প্রায়োগিক গবেষণার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো। আরডিএ সেই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ