ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

৪০ মিনিটের বিপন্ন অতিথি ‘কালা মধুরা’!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
৪০ মিনিটের বিপন্ন অতিথি ‘কালা মধুরা’! বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী কালা-মথুরা। ছবি- সুলতান আহমেদ  

মৌলভীবাজার: মাত্র চল্লিশ মিনিটের আগন্তুক অতিথি এসেছিল বিপন্ন কালা-মথুরা! তারপর মৃত্যুর স্থবিরতা গ্রাস করে ফেলে তার পুরো শরীর। ব্যর্থ হয়ে যায় তিন প্রকৃতিপ্রেমীর সব অদম্য প্রচেষ্টা। কালা-মথুরাকে ঘিরে ফুটে উঠে জীবনের বিচিত্র এ স্মৃতিটি। হৃদয়পটে জমা হয় চল্লিশ মিনিটের সময়টি। 

তার ডানা-ঝাপটানো, এদিক-ওদিক চোখে মেলে চাওয়া অথবা ফাঁদে পড়া অবস্থাতেই দৌড়ঝাপ দেবার ক্ষমতা প্রদর্শন থেকে একদল বন্যপ্রাণিপ্রেমী ভেবেছিলেন পাখিটিকে উদ্ধার গভীর বনে ছেড়ে দিলেও বোধহয় প্রাণে বেঁচে যাবে। কিন্তু না! সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো পাখিটি।

 

কালা-মথুরা আমাদের দেশের বিপন্ন প্রজাতির পাখি। খুবই কম দেখা যায়। প্রাকৃতিক বনের বৃক্ষসহ ঝোপঝাড় উজারের ফলে কালা-মথুরাসহ আমাদের দেশের নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য আজ ধ্বংসের মুখে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং পাখি পর্যবেক্ষক (বার্ড ওয়াচার) সুলতান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রামের কাপ্তাই বন বিভাগের গভীর বনে পাখি দেখতে গেলে হঠাৎ আমরা তিনজন ডানা ঝাপটানো শব্দ শুনতে পাই। তারপর শব্দ অনুসরণ করে যেতে যেতে দেখি একটি বিরল প্রজাতির কালা-মথুরা। ’ 

তিনি আরো বলেন, পাখিটা যে শিকারীর ফাঁদে আটকা পড়েছে তখনও আমরা তা বুঝতে পারিনি। আমরা ছবি ধারণ করে চলেছি। হঠাৎ সন্দেহ হয় যে, পাখিটি কেন উড়ছে না? কাছে গিয়ে নিশ্চিত হই- সে ফাঁদে আটকা পড়ে আহত হয়ে রয়েছে। এরই মাঝে অন্য কোনো পশু আক্রমণ করেছে; যার ফলে মারাত্মকভাবে আহত এ পাখিটি।  

বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী কালা-মথুরা ।  ছবি- সুলতান আহমেদ  সুলতান আরো বলেন, ‘বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাওলার নির্দেশে আমরা এই কালামথুরাটিকে ফাঁদ থেকে বের করে ফরেস্ট অফিসের দিকে হাঁটা শুরু করি এবং শেষ রক্ষা হল না আর; মাঝপথেই সে মারা যায়। খুব কষ্টের ছিল এ দৃশ্যটি!’

আমার সঙ্গে আরো দু’জন বার্ড ওয়াচার ছিলেন। এরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের (এমএস) শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান এবং বুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফায়েত আলম আবির।  

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণি বিষয়ক বহুগ্রন্থের লেখক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, কালা-মথুরা আমাদের দেশের মধ্যে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। খুবই কম দেখা মেলে। এর ইংরেজি নাম Kalij Pheasant এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lophura leucomelanos।  

সিলেট এবং চট্টগ্রামের চির সবুজ বন এবং তার আশপাশ এলাকায় এরা বসবাস করে। খাবারগ্রহণ অনেকটাই বনমোরগ ও বনমুরগির মতোই মাটি থেকে খাবার সংগ্রহ করে। দিনে মাটিতে চরে, রাতে গাছে থাকে। শস্যদানা, নানান গাছগাছালির ফল, বিভিন্ন পতঙ্গ, ছোট আকৃতির সরীসৃপ প্রভৃতি তার খাদ্য তালিকায় রয়েছে বলে এই বন্যপ্রাণী গবেষক বলেন।  

এর শারীরিক গঠন ও প্রজনন সম্পর্কে ড. মনিরুল বলেন, কালা-মথুরা আকারে বড় মোরগের মতো। পুরুষটির উচ্চ ৬৫ থেকে ৭৩ সে. মি. এবং স্ত্রীর উচ্চতা ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার। রাতের বেলা ওরা গাছের উপরে থাকলেও প্রজনন মৌসুমে কিন্তু ওরা বাসা করে মাটিতে। ঝোপঝাড়পূর্ণ কোনো স্থান নির্বাচন করে ওখানেই ডিম তা দেয়া এবং ছানাদের সঙ্গে মাটিতেই বসে থাকে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।