করমজলের আকর্ষণ
সুন্দরবন যেহেতু পুরোটাই ম্যানগ্রোভ, করমজলও এর ব্যতিক্রম নয়। করমজল যাওয়ার পথে দেখা যাবে শুশুকের ডিগবাজি।
২০০২ সালে সুন্দরবন-পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে কুমির প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলে সরকার। পুরুষ কুমির রোমিও আর নারী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল নিয়ে কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০৬টি কুমির রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি পূর্ণবয়স্ক এবং ২০১টি তিন থেকে নয় বছর বয়সী কুমির। করমজলের প্রবেশের পর দেখা পাওয়া যাবে সুন্দরবনের মানচিত্রের। এই মানচিত্রে এক নজরে সুন্দরবনটাকে দেখা যায়। এর পাশেই আছে একটি সুন্দরবন সংগ্রহশালা। সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কঙ্কাল, হরিণের কঙ্কাল, কুমিরের নমুনা ডিম, কুমিরের মাথাসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণির নমুনা রয়েছে। করমজলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। যার উপরে উঠে সুন্দরবনের উপরিভাগের সবুজাভ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়।
যেভাবে যাবেন
একদিনেই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাইলে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পারেন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/নন এসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছাড়ে। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনা নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে। মোংলা থেকে করমজল লঞ্চ বা ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে যেয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ভ্রমণে তুলনামূলক খরচও কম।
পেতে পারেন খাঁটি মধু
বনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসতে পারবেন বনের বিভিন্ন জায়গায় বসার জন্য তৈরি করে রাখা বিশ্রামখানায়। বনের বিভিন্ন খালের পাড়ে গোলপাতার ছাউনি আর কাঠের তৈরি এসব বিশ্রামখানায় বসে বনের শীতল হাওয়া মেখে হাঁটার ক্লান্তি দূর করা যাবে। রেস্টুরেন্ট থেকে চা, কফিসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পশুর নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে দেওয়া যাবে আড্ডা। এসব রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় সুন্দরবনের খাঁটি মধু। করমজল ছাড়াও মোংলার বিভিন্ন দোকান থেকে নিতে পারেন মধু।
করমজলে প্রবেশের নিয়ম
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে পশুর নদী পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক প্রতিদিন আসেন। যাদের এখানে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়। প্রায় ১ থেকে দেড় কিলোমিটারের কাঠের ট্রেইল ধরে বনের মধ্যে অনায়াসে হেঁটে হেঁটে দেখা যাবে সুন্দরবনের সৌন্দর্য। তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা এখানে মাঝে-মধ্যে বাঘের আসা-যাওয়া হয়।
করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন করমজল পর্যটন কেন্দ্রটি ইকো ট্যুরিস্টদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। এ দর্শনীয় স্থানে হরিণ ও কুমিরের প্রজনন, লালন-পালন, ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র এবং পায়ে হেঁটে বনের সৌন্দর্য দেখা যায়। তিনি জানান, দেশি পর্যটকদের ভ্যাটসহ ২৩ টাকা ও বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে ৩৪৫ টাকা প্রবেশ ফি নেওয়া হয়।
থাকতে পারেন যেখানে
সুন্দরবনের করমজল ঘুরে এসে রাতে থাকতে পারেন বন্দর শহর মোংলায়। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন হোটেল। এছাড়া রয়েছে লাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর। চাঁদপাঁই সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সুন্দরবন শর্মিলা ইকো কটেজ ও বাদাবন ইকো-কটেজ দু’টিসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি কটেজে রাত্রিযাপন করতে পারেন। কটেজে বসে সুন্দরবনের পাক-পাখালির ডাক শুনতে পারবেন। পায়ে হেঁটে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। নিরাপত্তার সঙ্গে রাত্রিযাপনের সঙ্গে পাবেন মানসম্মত খাবার।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
এমআরএম/আরআর