ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাইক্কাবিলের বিপন্ন পরিযায়ী ‘মরচেরং-ভুতিহাঁস’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯
বাইক্কাবিলের বিপন্ন পরিযায়ী ‘মরচেরং-ভুতিহাঁস’ বিপন্ন পরিযায়ী ‘মরচেরং-ভুতিহাঁস’।

মৌলভীবাজার: হঠাৎ তাকে দেখা গেলো, কিন্তু পরক্ষণেই আবার নেই! কিছু বুঝে উঠার আগেই ততক্ষণে হাঁসটি পানির অনেক নিচে গিয়ে জলজউদ্ভিদ খেয়ে আবার ফিরে এলো। এরা দীর্ঘক্ষণ খাবারের সন্ধানে পানির নিচে ডুবে থাকতে পারে।

এদের নাম ‘মরচেরং-ভুতিহাঁস’। ইংরেজি নাম- Ferruginous Duck এবং বৈজ্ঞানিক নাম Aythya nyroca

এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ থেকে ৪২ সেন্টিমিটার। তাদের তামাটে শরীর এবং লেজতল সাদা। স্ত্রী হাঁসটির চোখ লালচে এবং পুরুষ হাঁসটির চোখ সাদা।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাখি গবেষক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, মরচেরঙ-ভুতিহাঁস প্রায় বিপন্নপাখি। মানে এর সংখ্যা পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অন্য হাঁসের থেকে ‘ভুতিহাঁস’ এর পার্থক্য হলো এরা ডুবে ডুবে খাবার খায়। হাঁস কিন্তু ডুবতে পারে না। বেশির ভাগ হাসই দেখবেন সে মাথা পানির নিচে দিয়ে শাক-সবজি খায় তখন তাদের লেজ উপরে থাকে। আমাদের পালা হাঁসগুলোকে দেখবেন সে ডুব দিতে পারে না। অনেক কষ্ট করে ডুব দিতে হয়। ডুব দিলেই সে উঠে আসে। মানে সে ডুবে থাকতে পারে না। বিপন্ন পরিযায়ী ‘মরচেরং-ভুতিহাঁস’।  উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘যেমন- একটা ফোলানো বেলুনকে পানির নিচে ঢেসে ধরলে যে অবস্থায় হয় সেরকমই বেশির ভাগ হাঁসেদের অবস্থা। বেশির ভাগ হাঁসই কিন্তু পানিতে ভেসে থাকার জন্য তৈরি। কারণ সে একটা বেলুনের মতো। অনেক জোর করে পানির নিচে যেতে পারে কিন্তু পরক্ষণেই ভেসে আসবে। অধিকাংশ হাসেরই দেয়া যায়- ডুব দেবার সময় লেজ উপরে থেকে যায়। মানে প্রায় দেড় ফুট সে পানির ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। এই দেড় ফুট নিচে যে জলজউদ্ভিদ বা কাদার মধ্যে যেসব ছোট ছোট প্রাণী রয়েছে সেগুলোই তারা খেতে পারে। অধিকাংশ হাঁসই কিন্তু এমন যে- উপরে আর পানির দেড়ফুট নিচে নাগালের মধ্যে যা পড়ে সেটুকুই তারা খেতে পারে। ’

কিন্তু ভুতিহাঁসেরা তা নয়। ভুতিহাঁস’ অন্য হাঁস থেকে সুবিধা এই যে- সে ডুব দিয়ে অনেকদূর যেয়ে একেবারে মাটির উপরে যে জলজগাছপালা আছে সেগুলো অনায়াসে খেতে পারে। এই তার বিশেষ সুবিধা। তাদের দেহ এবং পালক ওইভাবে তৈরি। এর জন্যই ওর নাম ‘ভুতিহাঁস’। আমাদের দেশে চার জাতে ভুতিহাঁস আছে। ভুতিহাঁসেরা পরিযায়ী। এরা বহুদূরে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দিকে যায়। যেমন-রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া প্রভৃতি জায়গায় ডিম দিয়ে ছানা ফুটাতে চলে যায়। ওখানেই ডিম পাড়ে। তারপর আবার ছয়সাত মাস পরে আবার ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণের দেশগুলোতে শীত মৌসুমে এসে ছয়-সাত মাস থাকে বলেও জানান ইনাম আল হক।

প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মরচেরঙ-ভুতিহাঁস দলবেঁধে থাকে। দল ছাড়া তাদের খুবই কম দেখা যায়। দলবেঁধে থাকলেও দলের ভেতরে তারা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। ওরা যখন বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে তখন কিন্তু জোড়াবেঁধে যাবে। এরা মাটিতে বাসা করে। লতাপাতা জোগাড় করে আর গায়ের পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে তা দিয়ে মাটির উপরে একটি আস্তরণ বানিয়ে তার উপরে ডিম পাড়ে। ওরা আমাদের দেশে নভেম্বরে চলে আসে। আবার এপ্রিলের দিকে তারা ফিরে যায়। এপ্রিলের দিকে দলের মধ্যে দেখা যায় যে-ওরা জোড়া জোড়া হয়ে গেছে। তখনই বুঝতে হবে ওদের চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।

ভুতিহাঁসেরা পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন, তাই গবেষণার জন্য ওদের পায়ে রিং এবং শরীরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে তাদের উপর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তাদের পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সে অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাখিবিজ্ঞানী ইনাম আল হক।    

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।