ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পুরান ঢাকায় বানরের খাবার-বাসস্থান সংকট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৯
পুরান ঢাকায় বানরের খাবার-বাসস্থান সংকট

ঢাকা: নানা কারণে বিশ্বজুড়ে পরিচিত বুড়িগঙ্গাপাড়ের শহর ঢাকা। শত শত বছরের এ নগরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সরাসরি মিশে আছে পুরান ঢাকার বানর। ঢাকার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বানর থাকছে এই এলাকায়। তবে বর্তমানে ঢাকার এ ‘আদি বাসিন্দা’রা খাবার ও বাসস্থানের চরম সংকটে ভুগছে।

সম্প্রতি পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতে ঢাকার বেশিরভাগ এলাকাই ছিল ঝোপঝাড় এবং গাছপালায় ভরপুর।

এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় চারপাশ। ঢাকা থেকে হারিয়ে যেতে থাকে নদী-নালা, খাল-বিল, ঝোপঝাড়। সেইসঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে ঢাকায় বসবাসরত বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। তারপরও বানরই হচ্ছে একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা এ কংক্রিটের অরণ্যে এখনও টিকে রয়েছে।

পুরান ঢাকার প্রায় সবখানেই একসময় বানরের রাজত্ব থাকলেও বর্তমানে গেণ্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডে সাধনা ঔষধালয় কারখানা এবং পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে ১০০-১৫০ বানর বসবাস করে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। এ বানরগুলো এখানে প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছে।  বানর।  ছবি: বাংলানিউজএলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, সাধনা ঔষধালয়ের ওষুধ বানানোর কাজে ব্যবহার করা হতো গুড়। কারখানায় যখন ওষুধ বানানো হতো, তখন গুড়ের গন্ধে বানরগুলো কারখানায় চলে আসতো এবং চুরি করে করে গুড় খেতো। সাধনার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ড. যোগেশ চন্দ্র ঘোষ ১৯১৪ সালের দিকে তার কারখানার একটি ঘর বানরদের থাকার জন্য ছেড়ে দেন এবং বানরদের খাবারের ব্যবস্থা করেন, যা সাধনার তরফ থেকে আজও অব্যাহত আছে।

৩০ বছর ধরে দীননাথ সেন রোডের পার্শ্ববর্তী কবরস্থান দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন সোলেমান শেখ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সর্বোচ্চ ২০০ বানর থাকতে পারে এ এলাকায়। বানরদের খাবারের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। সকালে কারখানায় বানরদের ছোলা খেতে দেওয়া হয়, এরপর সিটি করপোরেশন থেকে গাজর, কলা, শসা, টমেটো বাদাম দেওয়া হয়, তবে একেকদিন একেকটা। কিন্তু তা বানরের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরান ঢাকার বানরগুলো ‘রেসাস ম্যাকাক’ প্রজাতির। দক্ষিণ এশিয়ায়ই এ বানরের আদি নিবাস। রেসাস প্রজাতির বানর উন্নত দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। মানুষের সঙ্গে বানরের শারীরিক কাঠামোর যথেষ্ট মিল থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা তাদের জৈব রসায়নের নতুন কোনো আবিষ্কার প্রথমে রেসাস বানরের ওপর প্রয়োগ করেন এবং তার ফলাফল দেখেন।  বানর।  ছবি: বাংলানিউজউন্নত বিশ্বে এ প্রজাতির বানরের যথেষ্ট চাহিদা থাকায় এবং কিছু অসাধু মানুষ বানর পাচার করার কারণেও দিনে দিনে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে এরা। ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) বিপন্ন প্রজাতির (রেড লিস্ট) তালিকায় স্থান পেয়েছে এ প্রাণীটি।  

পুরান ঢাকার বানর প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল এইচ খান বাংলানিউজকে বলেন, পুরান ঢাকার বানরগুলো চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় অনেকটাই দুর্বল এবং রোগা হয়ে পড়েছে। বানরগুলোর চেহারার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, তারা ভালো নেই। দেয়ালের ফাঁক-ফোকরে বসবাসের কারণে শরীরে নানা ধরনের ক্ষত তৈরি হয়। এ ক্ষত বাড়তে বাড়তে অসুস্থ হয়ে একসময় মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানিরও যথেষ্ট অভাব। তাই বানরগুলো মানুষের বাড়ির ছাদের পানির ট্যাংকি, নালা-নর্দমা ও বিভিন্ন দূষিত পানি পান করে। এমন দূষিত পানি পান করার কারণেও বানরগুলো নানা অসুখে ভোগে। দীর্ঘমেয়াদে অসুস্থ থেকে বানরগুলো ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।