পথে-প্রান্তরে কুড়িয়ে পাওয়া আহত গৃহপালিত আর বন্য পশু-পাখিদের সাহাযার্থে গড়ে তুলেছিলেন ‘সোল’ (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ) নামে সেবা-শুশ্রুষামূলক একটি সংগঠন। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র ‘সোল’ এর পরিচালক ছিলেন তানিয়া খান।
কিন্তু চলতি বছরের ১৩ মার্চ, বুধবার তার অকাল মৃত্যুতে শোক আর বেদনার কালো ছায়া নেমে এলেও থেমে যায়নি তার নির্দেশিত মহৎ এ কার্যক্রম। তারই অনুসারী যাকে নিয়ে তানিয়া খান বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যেতেন সেই সাদিক আহমেদ নিজ ইচ্ছায় ‘সোল’ এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।
চলতি বছর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও গবেষণায় অসামান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার (মরণোত্তর) সম্মাননা পেয়েছেন তানিয়া খান। গত ২০ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০১৯’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯’ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে তানিয়া খানের পরিবারের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মৌলভীবাজার জেলার আতওয়াধীন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ‘সোল’ এর নানা কার্যক্রমই এখন পরিচালনা করছেন সাদেক নিজেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুরে সরেজমিন মৌলভীবাজারের সোল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় বন্যপ্রাণীদের সেবাশুশ্রুষার নানান চিত্র। খাচাবন্দি তানিয়া খানের গৃহপালিত বিদেশি পাখিগুলো কিচিরমিচির কলতানে মুখরিত করে রেখেছে পুরো বাড়িটি। প্রয়োজনীয় খাবার ও সেবা পেয়ে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে মাত্র দু’দিনের বিপন্ন গন্ধগোকুল ছানাটি।
সোল সূত্র জানান, ৩২টি বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি পাখি, ৮ জোড়া বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর ও এদের ২ জোড়া ছানা, ২০টি কোয়েল পাখি এবং ৬টি কুকুর বর্তমানে রয়েছে। এছাড়া একটি আহত কবুতর ও একটি বিপন্ন গন্ধগোকুলের ছানাও দৈনিক সেবা-শুশ্রুষা পাচ্ছে।
সোলের এর বর্তমান কর্ণধার সাদিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, তানিয়া আপা আমাদের গৌরব। তার আদর্শের পথ ধরেই আমি চলতে চাই। প্রায় বারো বছর ওনার সঙ্গে থেকে এই মহৎ কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছি। নানা জায়গা থেকে নানান আহত বন্যপ্রাণীদের আমার সিএনজি অটোরিকশায় করে ধরে এনেছিলাম। আজ তানিয়া আপার কথা মনে হলে ব্যথায় বুকটা ফেটে যায়।
আহত বন্যপ্রাণী প্রসঙ্গে সাদিক বলেন, গত ৩০ এপ্রিল একটি আহত লজ্জাবতী বানরকে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী বিভাগ থেকে আমার কাছে পাঠানো হয়েছিল। সেবা-শুশ্রুষার মাধ্যমে ২৫ দিন ধরে তাকে সুস্থ করে তুলে গত ২৩ মে পুনরায় মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি। এছাড়াও গত ১৩ জুন মাত্র দু’দিনের গন্ধগোকুলের একটি বাচ্চা উদ্ধার করে আমাকে দেওয়া হয়েছিল। একটি এখন ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে। আর কিছুদিন পরে তাকেও মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী বিভাগের কাছে ফিরিয়ে দেবো।
তিনটি আহত কুকুরের মধ্যে সবচেয়ে সংকটাপন্ন কুকুরটা মরে গেলেও অপর দুটো সুস্থ আছে। এর মধ্যে একটি কুকুরকে তার মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান সাদিক।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এভাবে আমি আমার আর্থিক টানাটানির মধ্যেও পশুপাখিদের দৈনিক খাবারসহ নানা সেবা-শুশ্রুষা দিয়ে চলেছি। এর পেছনে ইতোমধ্যে প্রায় দশ হাজার টাকা আমার খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু একটি টাকাও আমি এখনো পাইনি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু মুছা শামসুল মোহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সাদিকের বন্যপ্রাণী বিষয়ক কার্যক্রমগুলো সন্তোষজনক। তার আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি অবশ্যই আমি বিবেচনা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৯
বিবিবি/এএ