তার জন্য এরইমধ্যে দুই হাজারেরও বেশি মূল্যবান গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আর এসব গাছ বিক্রি করা হয়েছে সাত বছর আগের দামে।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরের কাশিয়াডাঙ্গা থেকে কাকনহাট পৌর এলাকা হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্ত করা হবে এ বছর। যার প্রথম প্রস্তুতি হিসেবে তারা দু’পাশের গাছ কাটা শুরু করেছে।
সড়ক উন্নয়নের নামে পুরোনো এই সড়কটি চওড়া করতে গিয়ে দু’পাশে থাকা মূল্যবান গাছগুলো সাবাড় করছে। শুরুতে অল্প জনবল নিয়ে কাজ চললেও পরে দ্বিগুণ করা হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ জন করে শ্রমিক গাছ কাটার কাজ করছেন। কেবল বৃষ্টির জন্য ২/৩ দিন থেকে গাছ কাটা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এরইমধ্যে বেশির ভাগ গাছই কাটা হয়ে গেছে।
এদিকে, কাশিয়াডাঙ্গা থেকে আমনুরা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কের সব গাছই আবার সড়ক জনপথ বিভাগের নয়। বেশকিছু গাছের মালিকানা রয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সামাজিক বন এবং জেলা পরিষদের হাতেও। তাই এরমধ্যে কেবল সড়ক ও জনপথ বিভাগ কেটেছে ৬৬৩টি গাছ এবং বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেটেছে ৭৯০টি। আর বাকি গাছগুলো অন্যরা কাটছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া সাত বছর আগের দামে এসব গাছ বিক্রি হয়েছে। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল সওজের প্রধান বৃক্ষপালনবিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সার্ভে মূল্য তালিকানুযায়ী দাম ধরা হয়েছে। এখনকার গাছ কেন সাত বছর আগের দামে বিক্রি হলো তার কোনো সদুত্তোর মেলেনি।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মামুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, এসব গাছ কাটার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তাদের কাছে অনুমতির জন্য কেউ আবেদনও করেনি।
গাছ কাটা প্রশ্নে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ বিপ্লব কুণ্ডু জানিয়েছেন, কাজটি শুরুর আগে মতামত জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সভা করা হয়েছিল। ওই সভায় কার অধীনে কতগুলো গাছ রয়েছে তার হিসাব চাওয়া হয়েছিল। এরপর যারা যতগুলো গাছের প্রমাণ দিতে পেরেছেন, তাদের ঠিক সেই পরিমাণই গাছ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সড়কে তাদের কোনো গাছ নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরও (এলজিইডি) জানিয়েছে, গাছে তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই।
বিপ্লব কুণ্ডু স্বীকার করে বলেন, এই বিপুলসংখ্যক গাছ কাটার আগে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। তবে সাত বছর আগের দামে গাছগুলো বিক্রি হয়েছে কেন? সে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী শাখার সভাপতি জামাত খান বলেন, এরইমধ্যে তারা গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করছেন। কিন্তু এরপরও নির্বিচারে গাছ কাটার মহোৎসব চলছেই। সড়ক উন্নয়নের নাম দিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা গাছ নিধন শুরু করেছেন বলেও এসময় অভিযোগ করেন পরিবেশ আন্দোলনের এই নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
এসএস/আরবি/