ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘উদয়ী-জিরিয়া’: নতুন পাখি বাংলাদেশে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
‘উদয়ী-জিরিয়া’: নতুন পাখি বাংলাদেশে

মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের পাখি তালিকায় এবার যোগ হলো নতুন একটি পাখি। এর নাম উদয়ী-জিরিয়া। লম্বা পায়ের এ পাখিটি মূলত সৈকতপাখি। জলাভূমির আশপাশে আপনমনে ঘুরে বেড়ায়।

পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে উড্ডয়নকালে সে বাংলাদেশে যাত্রাবিরতি নিয়েছে। বাংলার উপকূলে খাবার সংগ্রহ করে সে হয়তো আবার পাড়ি জমাবে কাঙ্ক্ষিত পথে।

উদয়ী-জিরিয়ার ইংরেজি নাম Oriental Plover বৈজ্ঞানিক নাম Charadrius veredus। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে এ পাখির ছবিটি তুলে রেকর্ড করেছেন আলোকচিত্রী সুলতান আহমেদ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি কুয়াকাটায় গিয়েছিলাম একটি গবেষণার কাজে। পাখির দেখার অভ্যাস থেকেই কাজ শেষে দেখলাম বিচের মধ্যে কিছু বড় ধুলজিরিয়া এবং ছোট ধুলজিরিয়ার ঝাঁক রয়েছে। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় খেয়াল করলাম একটা পাখি একটু বড় লাগছে। সেই পাখিটার বেশ কিছু ছবি তুলে নিলাম। পরে ঢাকায় এসে বার্ড বাংলাদেশ গ্রুপে ছবিটি আপলোড দিয়ে জানতে পারলাম এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন পাখি। নাম Oriental Plover (উদয়ী জিরিয়া)।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই প্রথম উদয়ী-জিরিয়া পাখি বাংলাদেশে দেখা গেল। এই পাখিটার জন্ম হয় চীন এবং মঙ্গোলিয়াতে। ওই অঞ্চলেই বাসা করে। অন্যান্য যেসব সৈকতপাখি আছে, তারাও ওই অঞ্চলে এবং সাইবেরিয়াতে বাসা করে। উদয়ী-জিরিয়া শীত কাটায় অস্ট্রেলিয়াতে। এর অর্থ হলো- সে প্রতিবার চীন-মঙ্গোলিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যায়, আবার ফিরে আসে। পথে কিন্তু পড়ে বেশির ভাগই থাইল্যান্ড, কিছুটা মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ খুব একটা পড়ে না। কিন্তু ওরা একেবারে সরু পথ ধরে যায় না; অনেক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। ’

এ গবেষক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জলাভূমিতে দেখা গেল এই প্রথম। হয়তো বেশি দেখা যাবে না। কারণ, এই পশ্চিমে ওরা কমই আসবে। মানে যেহেতু ওরা সবসময় পানির পাশ দিয়ে যায়, তাই চীন-মঙ্গোলিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সময়ও পানির পাশ দিয়ে দিয়েই যাবে। ওই হিসেবে বাংলাদেশ খুব একটা পড়বে না। তবু আমরা খুব খুশি হলাম জেনে যে, হয়তো দু-একবার দেখা যাবে এই পাখিটাকে। ’

সৈকতপাখিদের দলে ‘উদয়ী-জিরিয়া’।  ছবি: সুলতান আহমেদ

সে এখন যাত্রাপথে রয়েছে উল্লেখ করে ইনাম আল হক বলেন, উদয়ী-জিরিয়া এখন অস্ট্রেলিয়ার পথে রয়েছে। এভাবেই সে ধীরে ধীরে যায়। এক নাগাড়ে উড়তে পারে না। এখানে হয়তো ২-৪দিন থাকলো। আবার একটু উড়ে পানির পাশের একটা জায়গায় চলে যায় এবং কাদাপানির পোকা ধরে খায়। নদীর পাড়ে, সমুদ্রের পাড়ে এরকম করতে করতে এক সময় অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে যাবে। শীত পার হয়ে গেলে আবার অস্ট্রেলিয়া থেকে চীন-মঙ্গোলিয়ায় ফিরে আসবে।

‘এই পাখিদের এমন নয় যে, একেবারে একজনের পিছু পিছু আরেকজন যায়। ওদের মাথার মধ্যে মোটামুটি কাঙ্ক্ষিত পথের একটা চিহ্ন থাকে। কিন্তু একটু এদিক-ওদিক হয়ই। সেই জন্য আমরা ভাগ্যবান যে, একটু এদিক-ওদিক হওয়ার কারণেই এই প্রজাতির পাখিটিকে বাংলাদেশে দেখতে পেলাম। ’

অভিযাত্রা এবং অবস্থান সম্পর্কে পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, ওরা খুব বেশি একসঙ্গে যায় না। দুই-চারটি বা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যায়। এখানে তো একটাই মাত্র দেখা গেছে। হয়তো এর আশেপাশে আরও দু-একটা ছিল। কিংবা সে দলহারাও হতে পারে। কিছু দিনের জন্য ওরা দলহারাও হয়ে যায় অনেক সময়। দল থেকে ছুটে গেলে ওরা খুব একটা দুশ্চিন্তা করে না। শুধুমাত্র এদের দল লাগে রাতে ঘুমানোর জন্যে। কারণ অনেকে মিলে একত্রে না ঘুমালে শত্রুরা ধরে ফেলে। তাছাড়া দিনের বেলা ওরা একা একাই বেশিরভাগ সময় কাটায়। চিন্তা করে না যে অন্যরা কোথায়।

‘রাতে তাদের ঘুমানোর জন্য একটা জায়গা থাকে নির্দিষ্ট– ভৌগলিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই রাতের বিশ্রামের স্থানটি নির্বাচন করে ওরা। তখন দলটা এক হয়ে যায়। উদয়ী-জিরিয়া আবার অন্য একটা প্রজাতির সৈকতপাখিদের দলেও থাকতে পারে। ও যে শুধুমাত্র উদয়ী-জিরিয়া পাখিদের দলে থাকবে তাও নয়। ’

‘উদয়ী-জিরিয়ার (Oriental Plover) গঠনশৈলী মোটামুটি আমাদের ছোট-নখ-জিরিয়ার (Little Ringed Plover) মতোই। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ থেকে ২০ সেন্টিমিটার। এর লম্বা পা দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল যে- এটি তো আমাদের দেশে বিচরণকারী কোনো জিরিয়া নয়। অন্য জিরিয়াদের চাইতে পা অনেকখানি লম্বা,’ যোগ করেন প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
বিবিবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।