ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ইলিশ গোত্রের মাছ ‘চাপিলা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০
ইলিশ গোত্রের মাছ ‘চাপিলা’ স্থানীয় বাজারে নিয়মিতই উঠছে নদী-হাওরের মাছ ‘চাপিলা’। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: নদী ও হাওর-বিলের চাপিলা মাছকে এখন প্রায়শই দেখা যাচ্ছে। মিঠাপানি এই  মাছটি খেতে তুলনামূলক সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি।

‘চাপিলা’ মাছকে কেউ কেউ ‘মুখচৌক্কা’ চাপিলা বলে। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মাছটি দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বড় চাপিতা কেজিপ্রতি ৫শ থেকে ৬শ টাকা আর ছোট আকার ২শ থেকে ৩শ টাকা। বড় আকারের মাছটার টেস্ট বেশি বলে বাংলানিউজকে জানান মৎস্য ব্যবসায়ী বোরহান মিয়া।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চাপিলা মাছ মূলত হাওরবিলের মাছ। এই মাছটি এখন মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছে। আমাদের জেলার হাওর অঞ্চলে এই মাছটা এখনো ধরা পড়ে। সমস্যা হচ্ছে অনেক প্রাকৃতিক বিল যখন ইজারা হয়ে যায়, ইজারা হলে অতিরিক্ত ফিরিং এর কারণে দেখা যায় যেকোনো বছর কম কোনো বছর বেশি।

‘সেক্ষেত্রে কোনো অঞ্চলে হয়তো এই মাছটি তেমনভাবে পাওয়া যায় না। যদি আমরা ইজারার বাইরে কিছু প্রাকৃতিক বিলকে রাখতে পারি তাহলে এসব মাছের ক্ষেত্রে প্রজনন সুবিধা বেশি আসবে। ’

ইজারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন বিল ইজারা দেওয়া হয়, ইজারার ক্ষেত্রে বেজাল শ্রাবণ মাছ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এটা আমরা প্রটেকশন দিয়েছি। শ্রাবণের পর থেকে জালটি ছোট মাছ ধরার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে। তবে দুই জাতীয় মাছের পোনা যদি থাকে, সেটা যদি নয় ইঞ্চির নিচে হয় জুলাই থেকে ডিসেম্বর তখন এটা ধরা যাবে না। এক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ধরনের কিছু কিছু মাছ আছে। তা নাহলে তো মানুষ মাছ খেতে পারবে না। মাছ তো ধরতে হবে।

‘ছোট মাছগুলো বছরে দুই থেকে তিনবার ব্রিড (প্রজনন) করে। চাপিলাও এর মধ্যে পড়ে। ফলে আমাদের হাওর-বিলে প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ উৎপন্ন হয়। চাপিলা মাছ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাছ। ’

অনেকটা ইলিশ মাছের মতো দেখতে চাপিলা

ইলিশ-চাপিলার পার্থক্য উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আরেকটি বিষয় দেখবেন যে, আমরা ইলিশ যে খাই ক্লোফিফর্মিস গোত্রের মাছে। ইলিশের পেটের নিচের দিকে দেখবেন কাঁটা আছে; চাপিলা মাছেরও দেখবেন সেই একই রকম পেটের নিচের দিকে কাঁটা। তবে ইলিশ মাছ সমুদ্রে থাকে এবং আকৃতি বড় হয়; আর চাপিলা মিঠাপানিতে থাকে এবং এর সাইজ ছোট হয়। ছোট সাইজে দেখতে কিন্তু দুই মাছকে প্রায় কাছাকাছি লাগে।

চাপিলাসহ ছোট মাছের পুষ্টিগুণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় মাছ অপেক্ষা ছোট মাছ খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। ছোট মাছ কাঁটাসহ খাওয়া যায় এবং কাঁটায় প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। সেক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষ যাদের শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতে রয়েছে, তাদের উপকার বেশি হচ্ছে। তাদের দেখবেন হাতে-পায়ে ব্যথা হয়; এগুলো কিন্তু ক্যালশিয়ামের ঘাটতির কারণে। আমরা যে ক্যালশিয়াম কিনে খাই এর চেয়ে ছোট মাছের এই বায়োলজিক্যাল ক্যালশিয়াম অনেকগুণ উপকারী। এছাড়াও ছোট মাছে বিভিন্ন ভিটামিন, ফসফরাস, আয়রন রয়েছে। যারা রক্ত স্বল্পতায় ভোগেন তাদের জন্য ছোট মাছে অধিক প্রয়োজনীয়। ছোট মাছ খেতেও আবার অধিক সুস্বাদু।

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, চাপিলা মাছের কৃত্রিম চাষ প্রযুক্তি এখনো ডেভেলপ হয়নি। এখনো মাছটি প্রাকৃতিক জলাভূমির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। জেলেদের আমরা এখন ছোট মাছগুলোকে মেরে ফেলতে বলি না। এর ফলে বড় মাছগুলো দ্রুত বড় হবে এবং ছোট মাছগুলোও জলাশয়ে থাকবে। তাহলে প্রতিবেশ-পরিবেশ ঠিক থাকবে।

আমরা যদি আমাদের প্রকৃতিক জলাশয়গুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি তাহলে কিন্তু আমরা ইলিশের মতো সব মাছের প্রজননকে সমৃদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো এবং আমরা সেটাই চাই বলেও জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।