ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ছানাদের প্যারেন্টাল কেয়ার নেয় শোল মাছ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০
ছানাদের প্যারেন্টাল কেয়ার নেয় শোল মাছ প্রাকৃতিক হাওরের শোল / ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: রাক্ষুসে মাছ শোল। অন্য মাছ তাড়িয়ে ধরে খাওয়ায় সে পটু।

তবে নিজের ছানাদের বিষয়ে আবার উল্টো। অন্য মাছেরা তার ছানাদের যেন না খেতে পারে শোল মাছ সেজন্য ‘প্যারেন্টাল কেয়ার’ (আশপাশে থেকে নিরাপত্তা) দেয়। ফলে অন্য মাছের তুলনায় এদের ছানা জলাভূমিতে বাঁচে বেশি। সুযোগ পায় বড় হয়ে ওঠার। বাংলাদেশের প্রায় সব মিঠাপানির জলাশয়ে পাওয়া যায় শোল মাছ। এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Channa striatus.  

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, শোল মাছ আমাদের মিঠাপানির মাছ। এটা রাক্ষুসে মাছের তালিকায় পড়ে। এছাড়াও গজার, টাকি, বোয়াল- এ মাছগুলোও রাক্ষুসে মাছের তালিকাভুক্ত। এদের মাথা কিছুটা সাপের মতো বলে তাদের Snake Headed Fish বলা হয়। ’

‘আরেকটি বিষয় হলো- শোল মাছ তার ছানাদের প্যারেন্টাল কেয়ার দেয়। যেহেতু এরা স্বল্প পরিমাণে ডিম দেয় এবং সেখান থেকে ডিম ফুটে বাচ্চা বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত এই মাছটি ছানাদের আশপাশে থাকে। যাতে অন্য কোনো মাছে খেয়ে না ফেলে। ’ 

এই শোল মাছের প্রজনন সম্পর্কে এ জেলা কর্মকর্তা আরো বলেন, এখন এ মাছটি চাষের পর্যায়ে চলে এসেছে। ময়মনসিংহে একটা হ্যাচারি রয়েছে তারা এই মাছটির প্রজনন করে এটিকে চাষের আওতায় নিয়ে এসেছে। তবে আমাদের জেলায় এটি এখনো আসেনি। এটি ভিয়েতনামের শংকর প্রজাতির শোল। এটাকে অনেকে ভিয়েতনামি শোল বলে। দেখতে আমাদের দেশি শোলের মতোই। আমাদের দেশের শোল কালো আর ওইটা অনেকটা সাদা।  
বিলে থেকে ধরা হয়েছে জ্যান্ত শোল।  ছবি: বাংলানিউজ
‘আর হাওরে যেটা প্রাকৃতিক শোল হয় এরা ডিম দিয়ে ছানা তুলে নিজেরাই ছানাদের কেয়ার নেয়। এরা মূলত টাটকা খাবার খায়। যেমন- ছোট মাছ, ছোট জলজ কীট, প্রাণীর পোনা প্রভৃতি। তারপর ছানাগুলো বড় হওয়ার পর ছোট মাছ ধরে ধরে খায়। ’ 

স্বাদ আর শৈশবস্মৃতি সম্পর্কে এ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, শোল মাছ বেশ সুস্বাদু। বিশেষ করে যখন শীতকালে মাছগুলো বড় হয় তখন তাদের স্বাদ আরো বেড়ে যায়।  

শরীরিক গঠনসহ রঙের অধিক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এ মাছটি ৩০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ওজন প্রায় এক কেজির উপরে হয়। মাছগুলো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে শরীরে অনেকটা হলদে ভাব চলে আসে। আমাদের প্রাকৃতিক হাওর-বিলে যদি আগাছা বেশি থাকে তবে তার শরীরের রঙে কালচে ভাব থাকে। আর যদি পানি পরিষ্কার থাকে তাহলে কিছুটা লালচে ভাব দেখা যায়।  

এখন আমাদের দেশে প্রাকৃতিক প্রজনন ভালোই হচ্ছে বলে পর্যাপ্ত পরিমাণে শোল মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর প্রায় সাড়ে ৭ কেজির মতো শোল মাছের পোনা অবৈধভাবে ধরার অপরাধে বিধিমালা অনুযায়ী জব্দ করে জুড়ি এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলোতে অবমুক্ত করেছেন বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।