ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাখিদের মিছিলের নগরী টাঙ্গুয়া হাওর

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেনাসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১২
পাখিদের মিছিলের নগরী টাঙ্গুয়া হাওর

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে ফিরে : বিকেলের আকাশের রঙ যেন সময়ে সময়ে পাল্টায়। নীল আকাশকে শুভ্র করে তোলে সাদা বক।

আবার ক্ষণিক পরেই লেনজা হাসের নীল রঙ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বাদামী রঙ ছড়ায় গঙ্গা কবুতর। আরো হরেক রকমের পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ- এক বাদ্যের তাল মেনে চলে।    

মাঘ মাসে এই হচ্ছে দেশের বৃহত্তম হাওর টাঙ্গুয়ার ছবি আর বাজনা। অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে রয়েছে পাখিদের মিলন মেলা।

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের খাল-বিল এখন পাখিদের উৎসব নগরী। হরেক রকমের পাখি দলে দলে বিভক্ত হয়ে উড়ছে। দল ছাড়া হচ্ছে না কেউ।

এক দল আরেক দলকে অতিক্রম করছে। কখনো জ্যামিতিভাবে, কখনো লম্বাভাবে। আবার কখনো ঠিক যুদ্ধ বিমানের মতোই উড়ছে পাখির দল।

একশ’ হাত দূর থেকে দেখলেও মনে হবে সামনে পানি বা কচুরিপানা। কিন্তু নৌকা নিয়ে যত সামনে এগোনো যায়, ততই ভুল ভাঙে। উড়তে শুরু করে অতিথিরা। পাখির ডানা ঝাপটায় মুখে-চোখে এসে পড়বে পানি।  

স্থানীয়রা জানান, শীতে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য এটি। অক্টোবরের মাঝামাঝি আর নভেম্বরের প্রথম দিকে অতিথি পাখি আগমন শুরু করে। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় টাঙ্গুয়া হাওর।

টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর, কানামুইয়া হাওর, পালই হাওর ও বিল জলাশয়ে এসব পাখি বিচরণ করছে।

কিছু পাখির নাম জানতে চাইলে হাওর টেকসই ব্যবস্থাপনা কমিউনিটি গার্ডের মো. আবুল কাশেক ও মাছ ধরা জেলে জজ মিয়া হেসে উঠে জিজ্ঞাসা করেন- কয়টার নাম বলব? বলে শেষ করা যাবে না।

লেনজা হাঁস, পিংহাঁস, বালিহাঁস, কাইম, গঙ্গা কবুতর, কালাকোড়া, পিয়ারী, মৌলবী, মাথায় টোপ, দুবড়া খাউড়ি, বৌড়াল, রানের কৌড়া, বৈদড়, আমডাক, ওডা, পদ্মাকৌড়ি, শঙ্খচিল, জলকুক্কুট, ফরালিসহ আরো অনেক নাম বলল দুজনে মনে করে করে।

জজ মিয়া জানাল- একটা পাখি আছে। নাম- কানে বগলা। এ পাখির একটি চোখ বলে জানান তিনি।

এসব অতিথি পাখি আবার গরমের শুরুতেই স্ব স্ব আবাসস্থলে ফিরে যায় বলে জানান আবদুল কাশেম। জেলে বা অন্য কেউ অতিথি পাখি ধরলে তাদের ধরে ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে নিয়ে যায় হাওর টেকসই ব্যবস্থাপনা কমিউনিটি গার্ড।

জানা যায়, ৭ হাজার একর আয়তনের বেশি ভূমিসহ ৫১টি ছোট-বড় বিল রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ও খাদ্যের সন্ধানে এসব বিলে নেপাল, চীন, মঙ্গোলিয়া, সুদুর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসে নানা প্রজাতির রঙ-বেরঙের লাখো অতিথি পাখি।

পাখিগুলোর অবাধ বিচরণে এক অন্যরকম মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য ফুঠে ওঠে হাওরের বিলগুলোতে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এবারো এ হাওরে প্রচুর পাখি এসেছে। তীব্র শীতের মধ্যেও পাখির কলতানে মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর। কেউ যেন অতিথি পাখি শিকার করতে না পারে- সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময় : ১৫১৫ ঘণ্টা,  জানুয়ারি ২০, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।