ঢাকা: বাঘের ভয়ে তটস্থ থাকে পুর জঙ্গল। সে ভয় চিড়িয়াখানাতেও কম নয়।
সোমবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায় এ দৃশ্য। দু’টি শাবকের মধ্যে ছেলে বাচ্চাটির নাম দুর্জয়। তাকে জয় করা সত্যিই একটু কঠিন। মায়ের মতো একটু রাজকীয়-রাশভারী স্বভাব নিয়ে থাকতেই তার যেন বেশি পছন্দ। তবে ঠিক বিপরীত স্বভাব মেয়ে বাচ্চা অবন্তিকার।
নামের দিক থেকে অবন্তিকা অর্থ রাণী হলেও রাজকীয় ভাব তার মোটেই পছন্দ নয়। বরং আতিথেয়তা প্রিয় অবন্তি খাঁচার পাশে এসে নিজের খুনসুটিতে বন্ধুত্ব করতে চায় সবার সঙ্গে। ক্যামেরা দেখলে ছবি তোলার জন্য আবার পোজও দেয়! লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে, সামনের দুই পা তুলে বেশ তাধিন তাধিন ছন্দ করে সে।
চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা জানান, ছেলে বাচ্চা দুর্জয়ের তুলনায় মেয়ে বাচ্চা অবন্তিকা একটু বেশিই দুষ্টু। মা আর ভাইয়ের সঙ্গেও সারাদিন তার দুষ্টুমি চলতে থাকে। কখনো স্নানের জলে ডুব দেয়, আবার কখনো ভেজা লোমের পানি ছিটিয়ে খুনসুটি করে মায়ের সঙ্গে। আর একটা-দু’টো মানুষ দেখলেই গড়িয়ে গড়িয়ে শিশুসুলভ আচরণে মুগ্ধ করে তাদের।
সত্যিই তাই; তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে জঙ্গলের অন্য প্রাণীরা, অথচ এখন তারা দু’জন একে অপরের সঙ্গে রীতিমতো খুনসুটি এবং খেলায় মেতে উঠেছে। একবার এ ওর দিকে হাত বাড়াচ্ছে, তো পরের বার ও এর দিকে।
সম্প্রতি জন্ম নেওয়া এ শাবক দুটি মাতৃস্নেহের সঙ্গে মানুষের স্নেহে বেড়ে উঠছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। বাঘছানাকে আদর যত্নে একদিকে যেমন বড় করে তুলছেন তাদের মা বাঘ বেলি, তেমনি নজর রাখছেন চিড়িয়াখানার চিকিৎসকসহ অপর কর্মীরাও। আর অতিরিক্ত খাবার খেতে শুরু না করা বাচ্চাগুলো এখনো ঘুম ঘুম চোখে তাকায় মায়ের দুধ খেতে খেতেই। পথচলা শেখে মায়ের পায়ে পায়ে চলে।
এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালীন ‘লকডাউনে’ দীর্ঘদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখায় পশুপাখিগুলো একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছে। এ সময়ে আমরা অনেকগুলো নতুন প্রাণী পেয়েছি। যেসব প্রাণী দীর্ঘদিন বাচ্চা দিত না, তারাও এখন বাচ্চা দিয়েছে। আর এ সময়ে চিড়িয়াখানায় নতুন দু’টি বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে, যাদের নাম রাখা হয়েছে দুর্জয় ও অবন্তিকা।
তিনি বলেন, পশুপাখির বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর আমাদেরও কিছু কাজ বা দায়িত্ব থাকে। বিশেষ করে বাচ্চাগুলোর নিয়মিত সঠিক পরিচর্যা ও দেখাশোনা, চিকিৎসা ইত্যাদি। আমরা সেগুলো সঠিকভাবেই করছি এবং আমাদের চিড়িয়াখানা এখন পশুপাখিতে ভরপুর। আর বাঘ শাবক দু’টি এখন তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকছে। আর বন্য প্রাণীর স্বভাবসুলভ হিংস্র আচরণের জন্য তাদের বাবাকে রাখা হয়েছে অন্য খাঁচায়।
এদিকে আগামী ১৯ আগস্ট থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানা সবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি যে, আগামী ১৯ আগস্ট থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের করোনা পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত করা হবে।
এদিন চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত হওয়ায় ২১০টি বক অবমুক্ত করেন মন্ত্রী। জন্ম নিবন্ধন করেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি ‘টগর-বেলি’র শাবক দুর্জয় ও অবন্তিকার। এছাড়া করোনাকালীন ‘লকডাউনে’ চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় নিরিবিলি পরিবেশে বিপুল পরিমাণ পশু-পাখি জন্মগ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২১
এইচএমএস/আরবি