মৌলভীবাজার: চা বাগানে বিচিত্র সৌন্দর্য নিয়ে আসে শীতকাল। শহুরে জীবনের অভ্যস্থতায় সে সৌন্দর্য অনেকেরই অদেখা।
২০২৩ সালের প্রথম সকাল আজ। রোববার (১ জানুয়ারি) চা বাগানের সাপ্তাহিক ছুটি। বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানেই এই রীতি বহুকাল ধরে অক্ষুণ্ন। চা বাগানগুলো বন্ধ থাকায় চা শ্রমিকদের আনাগোনা বা পদচারণা নেই চা উপত্যকায়। রয়েছে বর্ণনাতীত শীতকালের শোভা। চা বাগানের সেই সৌন্দর্যকে টুকরো টুকরো আলোকচিত্রে প্রকাশ করার লক্ষ্যেই সরেজমিন ভ্রমণ।
যে ফাঁড়ি পথ (খণ্ডিত রাস্তা) ধরে এগিয়ে যাওয়া হলো তা পিচঢালা। চারদিক কুয়াশা মোড়ানো। অনতি দূরের পথটুকু কুয়াশায় আবৃত। দেখা যায় না পরিষ্কারভাবে। রোপা আমন ধান কেটে ফেলা জমিতে এখন শুধুই শস্যহীন শূন্যতা। কুয়াশার চাদর তার ওপর গিয়ে পড়েছে। ফসলহীন জমিটুকুকে ঢেকে ফেলেছে ধোঁয়ার মতো করে।
এই পাকা ফাঁড়ি পথটুকু যেখানে গিয়ে শেষ, যেখানেই মাঠ পেরিয়ে চা বাগানের শুরু। হঠাৎ দেখা গেল, সেই কুয়াশাঘেরা মাঠের পথটুকু পাড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন এক বৃদ্ধা গ্রামীণ নারী। এই সকালে ফাঁড়িপথের উল্লেখযোগ্য চরিত্র হয়ে তার এটাই প্রভাতী আগমন।
‘এ পথ দিয়ে কি চা বাগানে যাওযা যায়’ – এ প্রশ্নের জবাবে সম্মতিসূচকের অংশ হয়ে নেড়ে উঠে তার মাথা। তবে কোনো শব্দ নয়। শুধুই নেড়ে ওঠা মাথা। আর সাথে বিস্ময়কর চাহনি!
প্রায় ৫০ মিনিটের ভ্রমণগতি ডিঙিয়ে অবশেষে চা বাগানের একটি কোণে অবস্থান নেওয়া গেল। দু’দিকে দু’রকম চায়ের অবস্থান। পূর্বদিকে চোখ ফেরাতেই দেখা গেল, ডানদিকে সবুজেঘেরা এবং কুয়াশা জড়ানো চা গাছেদের সারি। আর বামদিক প্রুনিং করা (মাথা ছাঁটাই) করা চা গাছের দলগত অবস্থান। এই শীতকালে কোনো কোনো সেকশনে (চা বাগানের আবাদকৃত সুনির্দিষ্ট চায়ের জমি) চা গাছের উৎপাদন বাড়তে এভাবে প্রুনিং করা হয়ে থাকে।
এরই ভেতর ঘনসবুজ চাগাছের রাজ্যের মাঝে দারুণ মুগ্ধতাটুকু নিয়ে মাথা তুলেছে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’। সব চা গাছেদের থেকে আলাদা হয়ে সে একাই যেন ঘোষণা দিচ্ছে তার এই উন্নত উত্থিত শিরের কথা।
চলে আসার সময় হয়ে এলো। পেছনে চোখ মেলে তাকাতেই দেখা যায়, দূরে হারিয়ে যাওয়া চা গাছের দুই রকম সৌন্দর্য। একদিকে সবুজে সবুজময়। অন্যদিকে মাথা কাটা চা গাছের সম্মিলিত অবস্থান। এমন শীতকালেই চা গাছের মাথাদের একযোগে কেটে ফেলে হয়।
সকালের কুয়াশাঘেরা চা বাগান – এর সৌন্দর্যটুকু শুধুই আঁখি যুগলের অনুভূতিতে রাঙা। যাকে বার বার শুধুই দেখতে ইচ্ছে করে – প্রভাতী কুয়াশার ভেতর ডুব দিয়ে। নীরবে-একাকী।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া সহকারী খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রোববার (১ জানুয়ারি) সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গল এবং তেঁতুলিয়াতে ১০ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে, ২১ ডিসেম্বর সারাদেশের মাঝে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে, ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়াও ২৬ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল এবং তেতুলিয়া যৌথভাবে সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২২
বিবিবি/এএটি